আল্লাহর আদেশে বাইতুল মুকাদ্দাস সর্বপ্রথম নির্মাণ করেন হজরত সুলাইমান (আ.)। বিভিন্ন জিনের শ্রমে মসজিদটি নির্মিত হয়। কারণ আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে তারা সুলাইমান (আ.)-এর অধীন ছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি সুলাইমানের অধীন করেছি জিনদের কতককে, যারা তার জন্য সমুদ্রের গভীর থেকে মণি-মুক্তা তুলে আনার কাজ করত। আমি তাদের নিয়ন্ত্রণ করে রাখতাম।’ সুরা আম্বিয়া-৮২
সুলায়মান (আ.) মসজিদের নির্মাণ ও কারুকার্যে সমস্ত মণি-মুক্তা ও সোনাদানা খরচ করেন। এসব মণি-মুক্তা সেখানে অক্ষত ছিল নববী যুগে। বিষয়টি সাহাবি হুজাইফা (রা.)-এর হাদিস থেকে স্পষ্ট।
তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বাইতুল মুকাদ্দাস আল্লাহ তায়ালার কাছে একটি মর্যাদাসম্পন্ন স্থান। দুনিয়ার সব গৃহের মধ্যে এটি একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গৃহ। এটি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সুলাইমান ইবনে দাউদ স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তা, ইয়াকুত ও জমরদ দ্বারা নির্মাণ করেছিলেন। সুলাইমান (আ.) যখন নির্মাণকাজ শুরু করেন, তখন আল্লাহ তায়ালা জিনদের তার আজ্ঞাবহ করে দেন। জিনেরা এসব মণি-মুক্তা সংগ্রহ করে আনত। সুলায়মান (আ.) এগুলো দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করেন। (ইবনে কাছির খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৪৯ )
বর্তমানে এসব স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তা মসজিদে আকসায় নেই। এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সুলাইমান (আ.) কর্তৃক মসজিদ নির্মাণের প্রায় ৪১৫ বছর পর বুখেত নছর নামে এক জালিম শাসক বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করে এবং আগুন লাগিয়ে সমগ্র শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। লুট করে নিয়ে যায় সমস্ত স্বর্ণ-রৌপ্য। সব ইহুদিকে নির্বাসিত করে পাঠিয়ে দেয় বাবেল শহরে।
ঘটনাটি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এলো, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদের।’ সুরা বনি ইসরাইল-৫
হাদিসে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। একবার হুজাইফা (রা.) রাসুলকে (স.) জিজ্ঞেস করলেন। হে রাসুল! মসজিদুল আকসায় রক্ষিত স্বর্ণ-রৌপ্য এখন কোথায়? তিনি বললেন, বনি-ইসরাইল জাতি যখন আল্লাহর নাফরমানি শুরু করল, গুনাহ ও কুকর্মে লিপ্ত হলো এবং পয়গম্বরদের হত্যা করল, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বুখেত নছরকে চাপিয়ে দিলেন। সে মসজিদুল আকসায় আক্রমণ চালায় এবং পুরুষদের হত্যা, নারী ও শিশুদের বন্দি করে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের সমস্ত ধন-সম্পদ; স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তা ১ লাখ ৭০ হাজার গাড়িতে বহন করে নিয়ে যায়। তারপর সেগুলো বাবেল শহরে সংরক্ষণ করে রাখে।
সে বনি ইসরাইলকে ১০০ বছর পর্যন্ত লাঞ্ছনাসহ নানা রকম কষ্টকর কাজে নিযুক্ত করে রাখে। তারপর আল্লাহ তায়ালা ইরানের এক সম্রাটকে তার মোকাবিলার জন্য তৈরি করে দেন। তিনি বাবেল জয় করেন এবং অবশিষ্ট বনি ইসরাইলকে বুখেত নসরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। যেসব ধনসম্পদ বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে লুণ্ঠন করেছিল, ইরান সম্রাট সেগুলো বাইতুল মুকাদ্দাসে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
এবার বনি ইসরাইলকে আল্লাহ আদেশ দেন, ‘যদি তোমরা আবারও নাফরমানি করো এবং গুনাহর দিকে ফিরে যাও, তবে আমিও পুনরায় হত্যা ও বন্দিত্বের আজাব তোমাদের ওপর চাপিয়ে দেব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ করো, আমিও পুনরায় তা-ই করব। বনি ইসরাইল-৮
ইহুদিরা যখন বাইতুল মুকাদ্দাসে ফিরে এলো এবং সমস্ত ধন-সম্পদ তাদের হস্তগত হলো, তখন আবারও তারা পাপ ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয়বার তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন রোম সম্রাটকে। রোম সম্রাট তাদের অগণিত লোককে হত্যা ও বন্দি করে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের সমস্ত ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এসব ধন-সম্পদ এখনো রোমের মন্দিরে সংরক্ষিত রয়েছে এবং থাকবে।
কেয়ামতের আগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যখন ইমাম মাহদি আবির্ভূত হবেন, তখন সমগ্র মুসলিম জাতিকে একত্র করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন এবং পুনরায় তিনি সমস্ত ধন-সম্পদ ১ লাখ ৭০ হাজার নৌকা বোঝাই করে বাইতুল মুকাদ্দাসে ফিরিয়ে আনবেন। (তাফসিরে কুরতুবি)