ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা মেট্রো রেলের মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশন পুনরায় চালু হয়েছে। এখানকার কার্যক্রম চালুর উদ্বোধন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, এক কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচে এই স্টেশন পুনরায় চালু হয়েছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, স্টেশনটির সংস্কারের কাজে খরচ নিয়ে নানা সময় নানান কথা বলা হয়েছে। আমাদের খরচ হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া কাজীপাড়া স্টেশন সংস্কার করতে আমাদের খরচ হয়েছিল ২০ লাখ টাকা কিছু বেশি।
তিনি জানান, মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে অন্য দুটি স্টেশন থেকে কিছু কিছু সরঞ্জাম আনতে হয়েছে। সেইসব জিনিস কিনে ও ওই স্টেশনের যন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ফলে হিসাব করে দেখা গেছে, মোট ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খরচ হবে। যদিও আগের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মেট্রো রেল মেরামত করে পুনরায় চালু করতে ৩৫০ কোটি টাকা এবং এক বছর সময় লাগবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব জনবল, বিদেশে মেট্রো রেলে চাকরি করা বাংলাদেশি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টিমের মাধ্যমে কাজ করেছি। এর মাধ্যমে সময় ও ব্যয় দুটিই সাশ্রয় হয়েছে।
মেট্রো রেলে দুর্নীতি হয়েছে কি না; সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এখনই দুর্নীতি বলবো না। এটা অপচয়। আগে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না, বাইরের এক্সপার্ট যেটাই বলেছেন, তাই তাই করা হয়েছে, যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না। এর ফলে অর্থের অপচয় হয়েছে।
পতন হওয়া শেখ হাসিনার সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে রাষ্ট্রের অর্থেরও অপচয় হয়েছে। জনগণের উপকারের পরিবর্তে টাকার খরচনির্ভর প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের উপকারনির্ভর প্রবৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশ হবে। এই ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেশ ও জনগণের কাজে আসবে।
উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেল সম্পর্কিত আইনে বলা হয়েছে, মেট্রোরেলের এমডি হবেন একজন সাবেক সচিব। এ আইনের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছিল। আমরা এই আইনের পরিবর্তন করেছি, দেশের যে কোনো মানুষ; যার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা আছে; তিনি মেট্রোরেলের এমডি হতে পারবেন। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর মধ্য দিয়ে যোগ্য লোকের যেমন মূল্যায়ন হবে, সঠিক খরচে সঠিক কাজটিও সময় মতো হবে।
সকাল সাড়ে ১০টায় উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুর-১০ রেল স্টেশন পুনরায় চালুর উদ্বোধন করেন। এরপর ১১টায় মেট্রো রেলের মাধ্যমে মিরপুর-১০ নম্বর স্টশন থেকে উত্তরামুখী যাত্রা করেন। এ সময় সেতু, সড়ক বিভাগের সচিব, মেট্রোলের এমডি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন।
গত জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন দুটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরই বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। তখন সরকার থেকে বলা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি ঠিক করে পুনরায় চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে।
এর মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট ফের চালু হয় মেট্রো রেল।
তবে, বন্ধ রাখা হয় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া মেট্রো রেল স্টেশন চালু করা হয়। অর্থাৎ বন্ধ হওয়ার প্রায় দুই মাস পরই কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা চালু হয়। ৮৭ দিন পর চালু হলো মিরপুর-১০ স্টেশন।