banglanews
Sunday , 9 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

ওষুধের দাম নির্ধারণ কোম্পানির হাতে, ঠুঁটো জগন্নাথ অধিদপ্তর

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 9, 2025 9:50 am

বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৬৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে ওষুধের পেছনে। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চার হাজার ১৮০টি জেনেরিকের ৩৫ হাজার ২৯০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ তৈরি করে। এর মধ্যে প্রায় হাজারের মতো ওষুধ অত্যাবশকীয় হলেও সরকারের তালিকাভুক্ত মাত্র ১১৭টি। কিন্তু চিকিৎসকদের লেখা ব্যবস্থাপত্রে এসব ওষুধের নাম নেই বললেই চলে। এ সুযোগে ওষুধের পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কোম্পানিগুলো। সুযোগ পেলেই বাড়িয়ে দিচ্ছে দাম।

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই গত দেড় দশকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ১৯৮২ সালে করা ওষুধ নীতির কয়েক দফা পরিবর্তন হলেও বাড়েনি সরকার নিয়ন্ত্রিত অত্যাবশকীয় ওষুধের তালিকা। এমনকি সুবিধা দিতে শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চাওয়ায় পাস হয়েছে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন।

এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালে হওয়া এ আইনের মাধ্যমে ওষুধের পুরো নিয়ন্ত্রণ কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দাম বাড়লেও কিছুই করতে পারছে না সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে হাজারের বেশি অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ বাজারে এসেছে। কিন্তু গত ৩২ বছরেও সরকার নিয়ন্ত্রিত সে অত্যাবশকীয় ওষুধের তালিকায় একটিও যুক্ত হয়নি। যার কারণে পুরো বাজার সরকার নয়, কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে ওষুধের পেছনে ব্যয় বাড়ছে। অথচ ডাক্তার ফি, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ও আইসিইউর বিল নিয়ে কথা উঠলেও ওষুধ নিয়ে আলোচনা নেই।’

তিন মাসে দাম বেড়েছে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত

ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নতুন ওষুধ নীতি পাস হওয়ার পর থেকে কোনো ধরনের অবহিত করা ছাড়াই প্রতিটি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ওষুধের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। বৃদ্ধির তালিকায় ওষুধ, ভিটামিন, চোখের ড্রপ এমনকি অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত সুচ, সুতা, গ্লাভসসহ সার্জারি উপকরণও রয়েছে।

গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সরেজমিনে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মেডিসিন মার্কেট ও কলেজ গেটের ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, অত্যাবশকীয় প্রায় প্রতিটি ওষুধেরই দাম বেড়েছে। এর বাইরেও বেড়েছে অর্ধ শতাধিক ওষুধের দাম। এর মধ্যে আটটির ৫০ শতাংশের বেশি। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ১১টির, ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ২২টির ও ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১১০ শতাংশ।

তিন মাস আগে মূত্রথলির অতিকার্যকারিতায় ব্যবহৃত ইউট্রোবিন ৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট পাওয়া যেত ৪৫০ টাকায়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। উচ্চ রক্তচাপের ন্যাট্রিলিক্স এসআর ২৭০ থেকে বেড়ে এখন ৩৩০ টাকা, হৃদরোগের ভাস্টারেল এমআর ট্যাবলেট ৫৪০ থেকে ৭২০ টাকা করা হয়েছে। পাইলস রোগীদের ড্যাফলন ৬৯০ থেকে ৮৪০, বাত চিকিৎসার অ্যানাফ্লেক্স ৯ থেকে ১৬ টাকা, প্রাথমিক হৃদরোগ প্রতিরোধে রসুভা ট্যাবলেট ১০০ টাকা বেড়ে এখন ৬০০ টাকা।

ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যবহৃত এমজার্ড এম ট্যাবলেট ডাইমাইক্রন এম ১২০ টাকা বেড়ে এখন ৪২০ টাকা। ১০০ টাকার এমপামেট বেড়ে ৬০০, এরিস্ট্রো ফার্মার প্লুভান প্লাস ২২০ টাকা বেড়ে ৭২০ টাকা হয়েছে।

ভিটামিন বি-ট্যাবলেট বিকোবিয়ন আগে ৩০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা ৩৯০ টাকা, নারীর প্রজননজনিত ব্যাধি নিরাময়ে ডাইনোজেস্ট ২০০ টাকা বেড়ে এক হাজার, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে ডাইড্রোন ট্যাবলেট ৩০০ টাকা বেড়ে ১২০০ টাকা এবং অস্ত্রোপচার পরবর্তী ব্যথা নিরাময়ের ৪০০ টাকার টোরাক্স ১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এখন কিনতে হচ্ছে এক হাজার টাকায়।

শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মেডিসিন মার্কেটের জনপ্রিয় ফার্মার মালিক লুৎফর রহমান হিমু বলেন, ‘গত এক দশকে ৩শ শতাংশ কিংবা তারও বেশি পরিমাণ ওষুধের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে গত বছরের শুরু থেকে কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই দফায় দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ওষুধের দাম এক মাসেই তিনবার বেড়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টির বাইরেও দাম বাড়াতে চাইলে নতুন দরের যুক্তিসহ অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। সরকার আমদানি কাঁচামালের সোর্স কান্ট্রি, দর, মানসহ বিভিন্ন বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই শেষে সমন্বয় করে। কিন্তু ২০২৩ সালের পর থেকে সরকারকে অবহিত করা ছাড়াই দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে।

ডিজিডিএর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো কাঁচামাল আমদানিতে অনেকটা প্রতারণতার আশ্রয় নিচ্ছে। দশ বছর আগে ইউরোপ থেকে কাঁচামাল আমদানির কাগজ জমা দিয়ে সেভাবে ওষুধের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও হালনাগাদ তথ্য অধিদপ্তরে দিচ্ছে না। ফলে কাঁচামাল ইউরোপ, না অন্য অঞ্চল থেকে আনা, সেটি বোঝার উপায় নেই। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের সক্ষমতা না থাকায় অধিদপ্তরও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ডিজিডিএর সাবেক উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা ড. এম এন আলম আমার দেশকে বলেন, ‘১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতে কোম্পানি চাইলেই দাম বাড়াতে পারত না। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ওষুধ ও কসমেটিকস আইনের ৩০ ধারা সংযোজনের মাধ্যমে শুধু সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা তালিকাভুক্ত ও আমদানিকৃত ওষুধের মূল্য সরকারের হাতে রাখে। এর মাধ্যমে ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের বাইরে থাকা অ্যান্টিবায়োটিকসহ হাজার হাজার দামি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার হারায়। কোম্পানিগুলোর মনোপলি বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে।’

তবে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী আমার দেশকে বলেন, ‘সরকারের মূল্য নির্ধারণ কমিটি নেই, তাই সরকার নিয়ন্ত্রিত তালিকার বাইরে যে কোনো ওষুধের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। এতে ঔষধ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। ১০০ টাকার ওষুধ ১৩৫ টাকা করা হলে, ১৮ টাকা ভ্যাট আর ১৭ টাকা যায় কেমিস্টের পেছনে। সরকার ভ্যাট তুলে নিলে ২০ শতাংশ দাম কমে আসবে। কিন্তু উল্টো ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে।’

একই ওষুধ ৫ কোম্পানির পাঁচ রকম দাম

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোম্পানিভেদে ওষুধের দামেও বিস্তর ফারাক। যদিও এসব ওষুধের কাঁচামালের উৎস, মান, উৎপাদন খরচ প্রায় এক।

সংক্রমণ রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ট্রাইজন ইনজেকশন একমি বিক্রি করছে ১৯০ টাকায়। একই ওষুধ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস সেপটন নামে ২৮৫ টাকায়, রোফিসিন নামে রেডিয়েন্ট ফার্মা ৩৬০ টাকায়, হেলথকেয়ার ওরিয়সেপ নামে ৩২০ টাকায়, এক্সিফিন নামে ইনসেপটা ২১৫ টাকায় এবং স্কাইফ ফার্মা ট্রাইজেট নামে বিক্রি করছে ২৫০ টাকায়।

একইভাবে ত্বকের জন্য ব্যবহৃত টার্বিনোস ব্র্যান্ডের ওষুধ ইবনে সিনা ৩০ টাকায়, একই ওষুধ ভিন্ন নামে অপসোনিন ৬০ টাকা, একমি ৫০ টাকা, স্কয়ার ৪০ টাকা, ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালস বিক্রি করছে ২০ টাকায়।

অ্যান্টিবায়োটিক এজিনি একমি ৫৫ টাকা, স্কয়ার জি ম্যাক্স নামে ৪০ টাকা, রেনেটা জি থ্রিন নামে নিচ্ছে ৩৫ টাকা। শ্বাসকষ্ট ও কাশির মন্টিলুকাস মোনাস টেন নামে একমি ১৭ টাকা ৫০ পয়সায়, ডেল্টা ১০ টাকা, স্কয়ার ১২ টাকা ৫০ পয়সা, রেনেটা ১৬ টাকায় বিক্রি করছে। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম অবগেল্ডি বীকন ফার্মা নিচ্ছে ১৩০ টাকা। একই ওষুধ ভিন্ন নামে জিস্কা ফার্মা ১০০ টাকা, নাভানা ১১৫ টাকা, একমি নিচ্ছে ১১০ টাকা।

দামের এমন তারতম্যের বিষয়ে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান বলেন, ‘একই ওষুধ হলেও কাঁচামাল আমদানিতে দেশের ভিন্নতা ও ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া ভিন্নতার কারণে দামের পার্থক্য হয়। এটি স্বাভাবিক বিষয়।’

দাম নিয়ন্ত্রণে দুই মেরুতে সরকার : কোম্পানি

হাতের নাগালে কম দামে মানসম্মত ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে গত ১৩ জানুয়ারি সচিবালয়ে ওষুধশিল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভাবনার সঙ্গে অন্য মেরুতে অবস্থান নিতে দেখা যায় কোম্পানিগুলোকে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওষুধের দাম সীমাহীন জায়গায় চলে যাচ্ছে। ছুরি ধরার মতো ওষুধ কোম্পানিগুলো ক্যাডার বাহিনী তৈরি করছে। তাদের আচরণ গণশত্রুর মতো।’

তার এ বক্তব্যের পর সভায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘আমরাও চাই মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পাক। এজন্য নীতিনির্ধারকদের মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গভাবে জানা থাকতে হবে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘মানসম্মত ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সরকারের একটি নীতিমালা থাকা উচিত। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে সেটি হয়নি। যার সুযোগ নিয়েছে কোম্পানিগুলো। সরকারের প্রধান লক্ষ্য একেবারে কম দামে অথবা বিনামূল্যে জনগণকে ওষুধ দেওয়া। ইতিমধ্যে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা