banglanews
Sunday , 9 March 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

স্পেন থেকে বেনজীরের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
March 9, 2025 10:34 am

একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বর্তমানে স্পেনের আরাগনের বোর্জা এলাকায় একটি বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করছেন। দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর গোপনে দেশত্যাগ করেন তিনি।

তবে এখন স্পেনে বসেই রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই পুলিশকর্তা। অবশ্য ২০২২ সালে আইজিপির পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। তবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ তার বিরুদ্ধে উঠে আসে অবৈধভাবে অর্জন করা বিশাল সম্পদ বানানোর খবর। কার্যত এরপর থেকে তিনি চুপসে যান।

জানা গেছে, অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেনজীরকে তলব করে। তবে তিনি দুদকের সামনে হাজির না হয়েই ২০২৪ সালের ৪ মে রাতে গোপনে দেশত্যাগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে ইমিগ্রেশন পার করিয়ে দেন।

যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। দেশত্যাগ করার পর দুই মাস দুবাইয়ে অবস্থান করে তিনি স্পেনে চলে যান। ওই দেশে নাগরিকত্বের (পিআর) জন্য তিনি আবেদন করেছেন। বেনজীর আইজিপি থাকাকালীন ডিআইজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেনÑ এমন একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডিআইজি আমার দেশকে জানান, আইজিপি থাকাবস্থায় লাল পাসপোর্ট বাদ দিয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য সাধারণ পাসপোর্ট নেন বেনজীর। দুবছর আগেই ওই পাসপোর্ট দিয়ে স্পেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে তিনি পিআর পাননি। বেনজীরের পুলিশিং লাইফে স্পেনে প্রায় ১৬ বার যাতায়াত করেছেন। আরাগনের বোর্জা এলাকায় তার কেনা একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় তার দুটি রেস্তোরাঁও রয়েছে।

বর্তমানে বেনজীর ওই রেস্তোরাঁটি কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করছেন। কালেভদ্রে তিনি সেখানে যান।

দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পর মাস ছয়েক নীরব থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি আচমকা সরব হয়ে ওঠেন। বিদেশে চলে যাওয়ার পর তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি লক করা ছিল। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ফেসবুকে তিনি নিয়মিত হলেও দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর আর কোনো পোস্ট দেননি। কিন্তু শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি নতুন করে সরব হন।

স্পেনে বসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে তিনি উসকানি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

তার অনুসারী পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে সরকারকে অসহযোগিতা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তার দুটি অডিও ভাইরাল হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি তার এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। ৬ ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাল হওয়া এক অডিওতে বেনজীরকে বলতে শোনা গেছে, আওয়ামী লীগ যখন সংগঠিত হবে, তখন পুলিশের উপস্থিতি আপনাদের সামনে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ওই অডিওতে বেনজীর বলেন, ‘বিএনপি ও এরশাদ আমলে অনেক এমপি পুলিশের মধ্যে তাদের লোক ঢুকিয়েছিলেন। এসব লোক এখনো রয়েছে, যারা নিজেদের পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।’ তার এই অডিও প্রকাশের পর পুলিশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বেনজীরকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তা’ বলে অভিহিত করে এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর আওয়ামী লীগ শাখার জুম মিটিংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। ওই মিটিংগুলোতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন বেনজীর। সেখানে তিনি বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।

কলকাতায় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের যে জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই জুম মিটিংয়েও বেনজীর উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি ১৩ মিনিট বক্তব্য দেন। এ ছাড়া কলকতায় পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তিনি জুম মিটিং করেছেন। হাবিবুর রহমান কলকতায় পালিয়ে গেলেও পুলিশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্রিয় রয়েছেন।

এদিকে ৫ আগস্টের পর বেনজীরের ‘এক বান্ধবী’ লাক্স তারকা উধাও হয়ে গেছেন। জানা গেছে, তিনি কলকতায় গেছেন। বেনজীরের দীর্ঘদিনের ওই বান্ধবীকে তিনি বনানীতে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। ওই বান্ধবীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজার সঙ্গে বেনজীরের দ্বন্দ্বও ছিল। বেনজীরের হঠাৎ সরব হওয়া শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

বেনজীরের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলতে পারে বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক আমার দেশকে বলেন, ‘যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন অপকর্ম করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং বিদেশে বসে নানারকম উসকানি দিচ্ছেন, তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এতে পুলিশের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ‘মব’-এর মতো বিশৃঙ্খলাকে আরও উসকে দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ড. তৌহিদুল হক আরো বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হবে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশে বসে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা।

বেনজীরের যত অপকর্ম : সপ্তম বিসিএস কর্মকর্তা গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ পুলিশের মধ্যে দাপুটে কর্মকর্তা বলে পরিচিত। তিনি ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।

২০২০ সালের ১৫ এপিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ডিএমপি কমিশনার পদেও কর্মরত ছিলেন। তিনি যখন র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন, তখন র‌্যাবে গুম, অপহরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটেছিল। এতে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ থেকে র‌্যাব ও বাহিনীটির ৭ কর্মকর্তাকে স্যাংশন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বেনজীর ছিলেন অন্যতম।

বেনজীর র‌্যাবের ডিজি থাকাকালীন র‌্যাবের কথিত মাদকবিরোধী অভিযানে ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনায় দেশে ও বিদেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কক্সবাজারের আলোচিত একরামুলের ক্রসফায়ারের ঘটনাও ঘটেছিল বেনজীর র‌্যাবের ডিজি থাকার সময়ে।

এছাড়া ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন বিরোধী মত দমন-নিপীড়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন তার ‘শিবির দেখামাত্রই গুলি’ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ক্র্যাকডাউনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার নামে ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪-এর ৩১ মার্চ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০ এপ্রিল তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন তিনি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২৫ মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেন বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেবেন। ২০২৪ সালের ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছে। এর তিন দিন পর ৯ জুন তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ডেকেছে দুদক। কিন্তু তারা কেউ দুদকের ডাকে হাজির হননি।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা

আপনার জন্য নির্বাচিত