মানব মস্তিষ্কে একটি মাস্টার ঘড়ি বলে কিছু আছে, যা দেহঘড়ি নামে পরিচিত। এই ঘড়িটি প্রায় ২০,০০০ নিউরন নিয়ে গঠিত এবং এটি হাইপোথ্যালামাস নামক মস্তিষ্কের একটি অংশে অবস্থিত। এই ঘড়ি শরীরের সব জৈবিক ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে।
শরীরের প্রতিটি টিস্যু এবং অঙ্গ একটি জৈবিক ছন্দ অনুযায়ী কাজ করে। দেহঘড়ি এই ছন্দ অর্থাৎ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোকে একটি সময়সূচি অনুযায়ী সচল রাখে; যাকে বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম। এ সার্কাডিয়ান রিদম হল ২৪ ঘণ্টার চক্র যা খাওয়া, ঘুম এবং তাপমাত্রার মতো প্রক্রিয়াগুলোর সময়কে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে, প্রয়োজনীয় জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোর মাঝে একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে।
সার্কাডিয়ান ছন্দ বা রিদমের সঙ্গে জড়িত জিনগুলো প্রতিক্রিয়া লুপ অনুসারে কাজ করে। এর মানে, যখন পর্যাপ্ত প্রোটিন তৈরি করা হয়, তখন এটি জিনের কাছে প্রোটিনের আরও উৎপাদন বন্ধ করার জন্য একটি সংকেত পাঠায়। মানুষ, প্রাণী, মাছি এবং এমনকি ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক জীব সার্কাডিয়ান ছন্দ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সূর্যের আলো এবং কৃত্রিম আলো উভয়ের সঙ্গে এক্সপোজার সার্কাডিয়ান ছন্দকে প্রভাবিত করে।
অধিকাংশ সুস্থ মানুষ দিনেরবেলা সক্রিয় থাকে। কিছু জীব নিশাচর, তারা রাতে সক্রিয় থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আলো চোখে প্রবেশ করে, তারপর তা মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং নির্দিষ্ট জিনের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে, যা দিনের জন্য শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দিনের শুরুতে আলোর সান্নিধ্যে আসলে মেলাটোনিন নামক যে হরমোনটি ঘুমাতে সাহায্য করে, তার উৎপাদন কমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আলো কমে যায়, মেলাটোনিন উৎপাদন আবার চালু হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতে মেলাটোনিন উৎপাদনের শীর্ষে উঠে ঘুমাতে সাহায্য করে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার স্ক্রিন এবং টিভি থেকে নির্গত আলোর সংস্পর্শে এলে মেলাটোনিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, যা ঘুমে ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে।
লেখক : সাইকিয়াট্রিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এডিকশন, সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।