নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য জমা দেওয়া আবেদনে সব দলের তথ্যে ব্যাপক ত্রুটি পাওয়া গেছে। তথ্যের এসব ত্রুটির কথা উল্লেখ করে দলগুলোর ঠিকানায় চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় কয়েকদিন আগে। গতকাল রোববার চিঠি দেওয়া শেষ হয়।
জানা গেছে, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ১৪৪টি দলের প্রধানকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ইসির উপসচিব মাহবুল আলম শাহ্। দলগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে ত্রুটি সংশোধন করে তথ্য সরবরাহের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট দল নিবন্ধনের জন্য অযোগ্য হবে।
বিভিন্ন দলের কাছে পাঠানো ইসির চিঠির কপি এসেছে আমার দেশ-এর হাতে। এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন দলের জমা দেওয়া আবেদনে ব্যাপক ত্রুটি রয়েছে।
ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমিনের রাজনৈতিক দল আম জনগণ পার্টির ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ইসির চিঠিতে বলা হয়, এনআইডি নম্বর ছাড়াই দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। ১৯ জেলায় ২০০ ভোটারের তথ্যে ঘাটতি পাওয়া গেছে। নেই কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটিতে সদস্য নির্বাচনের বিধান। ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি এবং দলে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই ঘোষণায় তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে দলটির দলিল বা কার্যক্রম সংবিধানপরিপন্থী নয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে পাঠানো চিঠিতে দলটির নিবন্ধনে জমা দেওয়া আবেদনে বেশকিছু ত্রুটি রয়েছে বলে জানানো হয়। ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি, ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই, ঠিকানাসহ সব উপজেলা, থানা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি, ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি, ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই, হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি, আবেদন ফরম-১-এর ফিল্ড নম্বর-৯-এ তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই, আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই এবং নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নেই।
আম জনতার দলের সভাপতি মিয়া মসিউজ্জামানকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দুই-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তরের বাড়িভাড়ার রসিদ, চুক্তিপত্র ও দলের মালিকানা দলিল যুক্ত করা হয়নি। একই ভাবে ১০০ উপজেলার ক্ষেত্রে কমিটির তালিকা ও দপ্তরের রসিদ যুক্ত নেই। দাখিল করেনি দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের তথ্য এবং গঠনতন্ত্রে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্যপদ সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি।
ইসির পাঠানো চিঠির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের জন্য ফরম-১ পূরণই করেনি। এমনকি দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সমপদাধিকারী কারো স্বাক্ষর ছাড়াই আবেদন জমা দিয়েছে দলটি। নেই দলের ইশতেহার ও দলের বিধিমালা ও দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ এবং দলের পক্ষে আবেদন করার ক্ষমতাপত্র সংযুক্ত করা হয়নি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পার্টির (বিএমপি) মোবাইল নম্বর ও এনআইডি ছাড়াই ২২ জেলা কমিটির সদস্য তালিকা জমা দেওয়া, ঢাকা ছাড়া বাইরের জেলার বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র নেই, নেই ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ১০০ উপজেলায় ২০০ ভোটারের তালিকা দেওয়ার বিধান থাকলেও তা দেয়নি দলটি।
জনতার বাংলাদেশ পার্টির নেই দলের কেন্দ্রীয় অফিসের পূর্ণ ঠিকানা, কমিটির সদস্য তালিকা এবং অফিস ভাড়া চুক্তিপত্র ও ভাড়ার রসিদ। ঠিকানাসহ কমপক্ষে ২২টি প্রশাসনিক জেলা দপ্তরের তালিকা ও এসব জেলার কমিটির সদস্য তালিকা, দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্র ও ভাড়ার রসিদ নেই। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস, অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় অফিস প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিটি অফিসে সদস্য হিসেবে ২০০ ভোটারের তালিকা নেই দলটির।
নতুন দলের নিবন্ধন আবেদনে ত্রুটির বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আইন অনুযায়ী যেসব শর্ত পূরণের তথ্য দিতে হয়, সব দলেরই সে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। ওই সব ঘাটতি পূরণে সব দলকেই ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।