বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, নায়ক, পরিচালক রাজ্জাক। আজ ২৩ জানুয়ারি এই কিংবদন্তির ৮৩তম জন্মদিন। নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন উপলক্ষে টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে। এ বছর চ্যানেল আই তাদের অনুষ্ঠানমালা ‘সকালের গান’-এ রাজ্জাক অভিনীত চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করবে। সংগীত পরিবেশন করবেন মো. খুরশীদ আলম, আতিয়া আনিসা ও মেজবাহ বাপ্পী।
তারকা কথনে উপস্থিত থাকবেন রাজ্জাকতনয় নায়ক সম্রাট, দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ‘এবং সিনেমার গান’-এ থাকবে নায়ক রাজ্জাক অভিনীত চলচ্চিত্রের গান। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে দেখা যাবে সাংবাদিক আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় নায়ক থেকে নায়করাজ। বেলা ৩টা ৩০ মিনেট থাকবে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত চলচ্চিত্র আয়না কাহিনি। এ ছাড়াও গতকাল দুপুর ৩টা ০৫ মিনিটে প্রচার হয়েছে নায়ক রাজ্জাক পরিচালিত টেলিফিল্ম ‘চেনা হয়ে যায় অচেনা’।
নায়করাজ রাজ্জাকের আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজ্জাক পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় পূজা চলাকালীন মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক ‘বিদ্রোহী’তে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা। তিনি ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
ষাটের দশকের মাঝের দিকে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তর দশকেও তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা পান। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন এবং কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশনসহ আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন।
তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা, যিনি নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্র পত্রিকা চিত্রালীর সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী তাকে ‘নায়করাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন। নিজের জন্মস্থান কলকাতায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং ১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে।
অভিনয়জীবনে তিনি বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, বাবা কেন চাকর, বড় ভালো লোক ছিলসহ মোট ৩০০টি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে তিনি মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বাচসাস পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
রাজ্জাক ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ চলচ্চিত্রে।