banglanews
Sunday , 16 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

আওয়ামী লুটপাটে পঙ্গু ইডিসিএল

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 16, 2025 10:57 am
দুর্নীতি

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের প্রতিটি খাত। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) এ মোটা অঙ্কের অবৈধ আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি, প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।

অথচ ওষুধ উৎপাদন বাড়েনি, উল্টো কমেছে। শুধু তাই নয়, বড় রকমের অনিয়ম হয়েছে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ক্রয় ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও। খোদ প্রতিষ্ঠানটির কর্তারাই সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নিজেরা কোম্পানি খুলে এখানে মালামাল সরবরাহ করতেন। বছরের পর বছর এভাবে চলতে চলতে পঙ্গু হয়ে গেছে ইডিসিএল। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটির এমন দশার জন্য দায়ীদের মূলে ডা. এহসানুল কবির।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা এহসানুল কবির। শুরুতে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও গত ১০ বছর টানা এই পদে ছিলেন তিনি। সরকারি চাকরির পাশাপাশি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের পদে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে গত ২ অক্টোবর ইস্তফা দেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুদক এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসম্পন্ন ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল ইডিসিএলের প্রতি। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিষ্ঠানটিকে পঙ্গু বানিয়েছে। ফলে ওষুধের দাম কমাতে যার ইতিবাচক প্রভাব রাখার কথা, সেখানে সরকারি হাসপাতালের চাহিদাই পূরণ করতে পারছে না।

প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি কর্মী

নিজেদের কারখানায় তৈরি করা ওষুধ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে ইডিসিএল। তবে চাহিদার ৭০ শতাংশ দিতে পারলেও ৩০ শতাংশ কিনতে হয় বাজার থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করেছে। যার পেছনে কাজ করেছে ৫ হাজার ৬০০ লোকবল। অথচ এক-তৃতীয়াংশ লোক দিয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ওষুধ তৈরি করছে বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস।

আবার ইডিসিএলের সমান লোকবল নিয়ে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করছে শীর্ষ কোম্পানিগুলো। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এমন একটি ফার্মাসিউটিক্যালসের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আমার দেশকে জানান, ‘সব বিভাগ মিলে তাদের ছয় হাজারের মতো লোক। গত বছর প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করেছেন।’

তিন হাজার লোক নিয়োগ দেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক

অপ্রয়োজনীয় এই বিপুলসংখ্যক লোকবল নিয়োগ হয়েছে ইডিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল কবিরের সময়ে। তার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ও ইডিসিএলে ২ হাজার ৫৭৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। তখনো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর আরো ৩ হাজার ১০০ জনকে নিয়োগ দেন কবির। এমডি, ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা ও শ্রমিক লীগের নেতারা মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব নিয়োগ হয়েছে। যার বড় অংশ আবার গোপালগঞ্জ ও তার নিজ এলাকার।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি নিয়োগে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন কবির। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দুদকেও অভিযোগ জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এখান থেকে ৪৭৭ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

ইডিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত লোক নিয়োগেও উৎপাদনক্ষমতা বাড়ার বদলে কমে যায়। বেতন-ভাতা পরিশোধের পাশাপাশি বাড়তি লোকের কারণে অযথা ঘোরাঘুরিতে কাজের পরিবেশ নিম্নপর্যায়ে। এমনকি ৫ আগস্টের পরও থেমে থাকেনি নিয়োগ কার্যক্রম। এ সময় আরো শতাধিক ব্যক্তি নিয়োগ পান। তবে বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে কবিরের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নিজেরাই কোম্পানি খুলে করতেন কাঁচামাল সরবরাহ

৫ আগস্টের পর বরখাস্ত করা হয়েছে ইডিসিএলের পরিকল্পনা শাখার ব্যবস্থাপক মনোয়ারুল আমিনকে। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার নিষেধ থাকলেও সেটি কর্ণপাত করেননি তিনি। সরকারি চাকরির পাশাপাশি মনোয়ারুল গড়ে তোলেন ফার্মা কেমিক্যালস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। ইডিসিএলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই কাঁচামাল সরবরাহ করত এই প্রতিষ্ঠান। আবার সবকিছু জেনেও এই কোম্পানিকে শুধু আর্থিক সুবিধার জন্য কাজ দিয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার সঙ্গে কারা জড়িত, তা নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।

বাইরের কোম্পানি থেকেও করা হয় উৎপাদন

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ইডিসিএলের কারখানা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ জায়গায়। ওষুধ তৈরি হয় ঢাকা, বগুড়া ও গোপালগঞ্জের কারখানায়। এ ছাড়া কনডম তৈরি হয় খুলনায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব কারখানায় অনেক যন্ত্র পড়ে থাকে। যন্ত্রগুলোর পূর্ণ ব্যবহার হতে দেখা যায় না। ফলে কিছু ওষুধ অন্যকে দিয়ে বা অন্যের কারখানায় তৈরি করে নেয়। এই পদ্ধতি ‘টোল ম্যানুফ্যাকচারিং’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ ওষুধের মোড়কে ইডিসিএল লেখা থাকলেও বাস্তবে তৈরি অন্য প্রতিষ্ঠানে। এমন ছয়টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই অন্য কোম্পানি থেকে ৬০০ কোটি টাকার ওষুধ তৈরি করে নিয়েছে ইডিসিএল। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়ে অন্য কোম্পানিতে উৎপাদনের পেছনে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

ইডিসিএলের উৎপাদন শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘জনবল হয়তো সামান্য বেশি থাকতে পারে। আসল সমস্যা হলো চাহিদার তুলনায় নিজেদের সক্ষমতায় ঘাটতি। আমাদের জায়গার সবচেয়ে বড় সংকট। এ কারণে রাতারাতি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। বর্তমানে শুক্র ও শনিবার অতিরিক্ত সময় দিয়েও তিন শিফটে উৎপাদন করতে হচ্ছে। তারপরও চাহিদা পূরণ করতে না পারায় টোল দিয়ে উৎপাদন করাতে হচ্ছে।’

চাহিদা পূরণে ব্যর্থ, বাজার থেকে কিনতে হয় ওষুধ

ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করে ইডিসিএল। কিন্তু চাহিদা পূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আলাদা করে বাজার থেকে কিনতে হয়। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ২০২০ সালের তথ্য মতে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ পান। আবার চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৫ শতাংশই যায় ওষুধের পেছনে। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় রোগী।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে প্রতি বছর প্রায় ২০ কোটি টাকার ওষুধের প্রয়োজন হয়। যার অর্ধেকই কিনতে হয় বাজার থেকে। হাসপাতালটির গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নাসির আহমেদ রতন আমার দেশকে বলেন, ‘ইডিসিএল যে ওষুধ দেয় তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগ রোগী নিম্ন ও মধ্য আয়ের। পর্যাপ্ত ওষুধ না দেওয়ায় মাঝপথেই বহুরোগী ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। চিকিৎসক দিয়েছেন ১৫ দিনের, কিন্তু রোগী পাচ্ছে তিন দিন কিংবা সর্বোচ্চ সাত দিনের। বাকি ওষুধ যে কিনে হলেও খেতে হবে সে ব্যাপারে রোগীকে কাউন্সেলিং করার মতো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টও নেই।’

অভিন্ন তথ্য জানান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইডিসিএলের বাইরেও বাজার থেকে ৩০ শতাংশ ওষুধ কিনতে হয়। হাসপাতালের বরাদ্দেও সংকট রয়েছে। ওষুধ কিনতে আগে মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ পাওয়া যেত, যা এখন বন্ধ রয়েছে।’

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

সম্প্রতি ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়া মো. আ. সামাদ মৃধা আমার দেশকে বলেন, ‘আগের পরিচালকের দুর্নীতিসহ যা কিছু রয়েছে সেগুলোর তদন্ত হচ্ছে। সেগুলো নিয়ে কিছু বলার নেই। উৎপাদন বাড়ানো, সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা জায়গা সংকটসহ যে কোনো কিছুর ব্যাপারেই এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘অনেক প্রত্যাশা নিয়ে নতুন পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অতিরিক্ত জনবল বিশাল চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তারপরও ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। ক্যানসার, হৃদরোগের মতো জটিল রোগের দামি ওষুধ তৈরি করা ও বিনামূল্যে দেওয়া যায় কি না ভেবে দেখতে হবে।’

সাবেক পরিচালকের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের পরিচালকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ছিল। দুদক বিষয়টি তদন্ত করার কথা, না করে থাকলে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।’ জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘ইডিসিএল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে ব্যবহারের প্রবণতা ছিল। শুধু চাকরি দেওয়ার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। এটাকে অবশ্যই সক্ষম করতে হবে। এটাতে সরকারের পূর্ণ নজর দেওয়া উচিত।’

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা