দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বই প্রকাশের জন্য আর কাউকে যেন জেলে যেতে না হয়। আগামী দিনে এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে নাগরিকদের মত প্রকাশের ও চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে, রাষ্ট্র বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
শুক্রবার অমর একুশের বইমেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আমার দেশ’র নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী সঙ্গে ছিলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, গণতন্ত্রের জন্য চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই সেখানে গণতন্ত্র থাকে না, মানুষের অধিকারও থাকে না। নাগরিকদের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, মত প্রকাশের জন্য আমার মতো যাতে আর কাউকে কারাভোগ করতে না হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর বইমেলায় এসে ভালো লাগছে। বুয়েট ও আইবিএ’র শিক্ষার্থী হিসেবে বাংলা একাডেমির এই বইমেলা চত্বর আমার কাছে খুবই পরিচিত ও আবেগের জায়গা। সর্বশেষ ২০১২ সালে বইমেলায় এসেছিলাম। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের উপর যে জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছিল, এরই ধারাবাহিকতায় আমাকে ৫ বছর কারাভোগ ও ৫ বছরের বেশি সময় নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল। আদালত চত্বরে হাসিনা বাহিনী আমার উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছিল। দেশের বিভিন্ন জেলার আদালতে আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করেছিল।
এবারের বইমেলায় মাহমুদুর রহমানের চারটি বই বের হয়েছে। বাইগুলো হলোÑ দ্যা রেইজ এণ্ড চ্যালেঞ্জ অফ ইন্ডিয়ান হ্যাজিমন ইন সাউথ এশিয়া, সিলিকটেড এডিটরিয়াল, গুমের জননী এবং হাসিনার হাসিনার ফ্যাসিবাদ। এসব বই অনন্যা প্যাভিলিয়ন. সৃজনী, মহানগরসহ বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ‘জেল থেকে জেলে’ বইয়ের ষষ্ঠ সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে অনন্যার প্যাভিলিয়নে।
দ্যা রেইজ এণ্ড চ্যালেঞ্জ অফ ইন্ডিয়ান হ্যাজিমন ইন সাউথ এশিয়া বই সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ যে কতটা যে ভয়ংকর তা এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ে আমি ভারতীয় আধিপত্য মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার ছোট রাষ্ট্রগুলোর করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেছি। এটি ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এবং গবেষকসহ বোদ্ধাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হতে পারে।
বইমেলায় অনন্যা প্যাভিলিয়ন. সৃজনী, মহানগর, জিয়া পরিষদ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগার ও ইনকিলাব মঞ্চের স্টল পরিদর্শন করেন তিনি।
ইনকিলাব মঞ্চের স্টলে ‘জুলাইয়ের গ্রাফিতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন কালে তিনি বলেন, যতদিন জীবিত আছি এবং আমার দেশ চালু থাকবে ততদিন জুলাই শহীদদের ভুলতে দেব না। যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে জুলাই বিপ্লবের বয়ান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। যেখানে মানুষ প্রাণখুলে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারছেন। আমরা সবাই তরুণদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছি। যদি জুলাই বিপ্লব না হতো তাহলে আমি দেশে ফিরতে পারতাম না, এই বইমেলাও আসতে পারতাম না। আমার বইও মেলায় আসতো না।
বিকেল ৪টার কিছু সময় পর বাংলা একাডেমি চত্বরের বইমেলায় অনন্যা প্রকাশনী স্টলে পৌঁছলে বিভিন্ন বয়সী পাঠকরা তাকে ঘিরে ধরেন। অনেকেই তার কিনে অটোগ্রাফ নিতে ভিড় ঘিরে ধরেন। এসময় তিনি বিপুল সংখ্যক পাঠককে অটোগ্রাফ দেন তিনি।
বুদ্ধিভিত্তিক জাতি গঠনে বই পড়ার উপর জোর দিয়ে মাহমুদুর রহমান সবাইকে পড়ার আন্দোলন ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।