পবিত্র রমজানে সরকারি অফিসের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হওয়ায় মেট্রোরেলে ও স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে রোজার প্রথম দিন। এদিন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রথম রোজা ও সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার বিকেলে মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী মেট্রোরেলে অফিস ফেরত যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় যায়। এই রুটের প্রথম স্টেশন অফিসপাড়া মতিঝিল হওয়ায় সেখান থেকেই যাত্রীতে ভেরে আসছির প্রতিটি ট্রেন। ফলে পরের স্টেশনগুলো থেকে যাত্রী কম উঠার সুযোগ পান। প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক বেড়ে যাওয়ায় পা রাখার জায়গা ছিল না। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই এমআরটি পাস অথবা র্যাপিড পাস ব্যবহার করায় একক যাত্রার টিকিটের লাইনে তেমন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি।
দেখা যায়, প্রায় ৮ মিনিট পরপর মতিঝিল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ট্রেন ছিল যাত্রীবোঝাই থাকায় পরবর্তী স্টেশনগুলোতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সময় ট্রেনে উঠতে অনেকে হুড়োহুড়ি করেও ট্রেনে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে কোথাও কোথাও ট্রেনের দরজা বন্ধর সময় কারো পা, কারো ব্যাগ, কারো হাত আটকে যেতেও দেখা গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ট্রেনের দরজা বন্ধ করতে একাধিকবার চেষ্টা করতে হয়েছে।
সচিবালয় স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রী আশরাফুল আলম বলেন, মেট্রোরেলে করেই সব সময় অফিসে যাতায়াত করে থাকি। রমজান মাসের সময়সূচি অনুযায়ী রোজা ও সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় একের পর এক ট্রেন মিস করতে হয়েছে।
মানসুরা বেগম নামের আরেক যাত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে নতুন অফিস সূচি দিয়েছে, মেট্রোরেলও সেই অনুযায়ী চলছে। প্রথম রোজার দিন সপ্তাহেরও প্রথম কর্মদিবস রোববার। ফলে অফিস ভেসে মেট্রোরেলে উঠতে গিয়ে প্রচণ্ড ভিড় তৈরি হয়েছে, ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে হয়ত স্বস্তি ফিরবে।
এর আগে রমজান উপলক্ষ্যে মেট্রোরেল পরিচালনার বিশেষ নির্দেশনা ও সময়সূচি দেয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সে অনুযায়ী, পবিত্র রমজানের সময় ইফতারে পানি পান করতে প্রত্যেক যাত্রী মেট্রো ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় শুধুমাত্র ২৫০ মিলি লিটার পানির বোতল বহন করতে পারবেন। তবে পানি যেন পড়ে না যায় সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যবহৃত পানির বোতল অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম/কনকোর্স/প্রবেশ ও বাহির হওয়ার গেটে থাকা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কোন অবস্থায় প্ল্যাটফর্ম, কনকোর্স ও মেট্রো ট্রেনের ভেতর অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন এবং শুক্রবারের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে। সময়সূচি অনুযায়ী, সর্ব প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সকাল ৭ট ১০ মিনিটে ছাড়বে ও সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টায় ছাড়বে। অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সর্বপ্রথম ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। এই সময়সূচি অনুযায়ী পুরো রমজান মাস অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত চলবে।
এদিকে, রোববার প্রথম রোজা ও কর্মদিবসে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তেজগাঁও অংশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, বিজয়সরণী দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সময় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল নেওয়ার বুথগুলো বন্ধ ছিল। কিছুটা দূরে এক্সপ্রেসওয়ে কর্মীরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাতে টোল আদায় করছেন। এসে বেশি সময় লাগায় এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সময় যানবাহনের জট লেগে যায়।
হাসিবুল হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে তেজগাঁও এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করায় এমন যানজট হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত টোল দেওয়া যায়, হাতে হাতে টোল দেওয়ায় যানবাহন হয়েছে।
এ বিষয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রমজানের মাসে যানজট কমাতে ডিএমপি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করতে বলেছে। পরীক্ষামূলকভাবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ভালো ফলাফল আসলে পরবর্তীতে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পরামর্শে তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর পথে স্বয়ংক্রিয় টোল বুথ বন্ধ করা হয়েছে। যানজট কমাতে পুলিশ এমন পরামর্শ দেয়।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক নির্শেনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে উত্তরার দিকে যাতায়াতে যানজট এড়াতে মহাখালীর র্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেয় ডিএমপি। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলের গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৮০ কিলোমিটার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নতুন গতিসীমা কার্যকর করা হয়, যা অমান্য করলে মামলা করা হবে।