banglanews
Monday , 3 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

ট্রানজিটের ফায়দা শুধু ভারতের, দেবপ্রিয়র তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 3, 2025 9:06 am

শেখ হাসিনার সময়ে ভারতকে দেওয়া একতরফা ‘ট্রানজিট’ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ট্রানজিটের নামে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগব্যবস্থার সুফলের পুরোটাই পেয়েছে ভারত। দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) পণ্য পরিবহনে সুবিধা পেয়েছে ভারত। এর বিপরীতে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ চাইলেও পায়নি বাংলাদেশ। ট্রানজিটের আয় দিয়ে বাংলাদেশ একসময় ‘সিঙ্গাপুর’ বনে যাওয়ার স্বপ্নও পূরণ করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিতে বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এ খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে মাত্র ৩৭ লাখ টাকা। ট্রানজিট থেকে সামান্য আয় নিয়ে যেমন দেশের অর্থনীতিবিদ-বিশ্লেষকদের উদ্বেগ আছে, তেমনি এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আছে বড় ধরনের উদ্বেগ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জুন থেকে ভারতকে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় প্রথমে কলকাতা-আশুগঞ্জ নৌপথ এবং তারপর আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরার আগরতলায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ।

২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তি হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এসবের মধ্যে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতের করিডোর ব্যবহারের সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ।

এনবিআর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে স্থায়ী আদেশ জারি করা হয়। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর আখাউড়া-আগরতলা রেল যোগাযোগ ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন হাসিনা-মোদি। আর ক্ষমতা থেকে পতনের কয়েকদিন আগে গত জুনে ভারত সফরে গিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়ার সমঝোতা চুক্তি করেন শেখ হাসিনা। এই চুক্তির আওতায় গেদে-দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পণ্যবাহী রেল বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আবার হলদিবাড়ি-চিলাহাটি যাবে।

ভারতকে বাংলাদেশের বুক চিড়ে ট্রানজিটের পক্ষে হাসিনা সরকার যেমন মরিয়া ছিল, তেমনি দেশের সুশীলরাও ছিলেন সোচ্চার। সুশীলদের মধ্যে এক্ষেত্রে সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি ট্রানজিটের আয় দিয়ে দিনবদলের গল্প শুনিয়েছিলেন দেশের মানুষকে। ট্রানজিট বাস্তবায়ন হলেও তার সেই ‘সিঙ্গাপুর’ বনে যাওয়ার বাস্তবতার দেখা এখন পর্যন্ত মেলেনি।

কী বলেছিলেন সুশীল সমাজ ও ড. দেবপ্রিয়, এখন কী বলছেন?

অতীতে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিরোধিতাকারীদের কড়া সমালোচনা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রানজিট বিরোধিতাকে ‘অশিক্ষিতদের বিতর্ক’ বলে মন্তব্য করেন।

সেই বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সীমানা ধরে পণ্য পরিবহন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। অথচ বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে বিতর্কের ইস্যু করা হয়েছে।’ রেহমান সোবহান বলেছিলেন, ‘ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশাল ক্যাপিটাল মার্কেট বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।’

ট্রানজিটের পক্ষে সে সময় জোরালো যুক্তি দেখিয়েছিলেন ড. দেবপ্রিয়। সিপিডির ব্যানারে তিনি নিয়মিত সভা-সেমিনার করে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করেন। যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর বনে যেতে পারে। এ ছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন টকশোতেও ট্রানজিটের পক্ষে সাফাই গান তিনি। ইউরোপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ইউরোপের এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আনা-নেওয়াতে যেমন বাধা নেই, বাংলাদেশ ভারতের ক্ষেত্রেও সেটি হতে পারে বলে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন।

ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট নিয়ে তার আগের অবস্থান ঠিক ছিল কি না ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কাছে বক্তব্য চেয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করেছে আমার দেশ। প্রথমে টেলিফোনে তাকে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। জবাবে তিনি দেশের বাইরে বলে জানান।

পরে লিখিত আকারে তার কাছে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলো ছিলÑ‘একসময় আপনি বলেছিলেন, ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব উপার্জন করবে। কিন্তু আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকার (বাংলাদেশ) ট্রানজিট ফি হিসেবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন টাকা পেয়েছে। আপনি কি মনে করেন এটি বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য ও উপযুক্ত পরিমাণ? আপনি অতীতে বলেছিলেন যে, সরকার ট্রানজিট ফি থেকে বিলিয়ন ডলার আয় করবে।

বাস্তব পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে কি আপনি বাংলাদেশের জনগণকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন? এখনকার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আপনি কি মনে করেন যে, আপনার পূর্ববর্তী হিসাব এবং পূর্বানুমান ভুল ছিল? যদি আপনার পূর্ববর্তী হিসাব ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কি বাংলাদেশের জনগণের কাছে দুঃখপ্রকাশ করবেন?’ তবে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি বর্তমান সরকার দ্বারা গঠিত অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয়।

ট্রানজিট নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞ-অর্থনীতিবিদরা

ভারতের সঙ্গে কোনো অসম চুক্তি চায় না বাংলাদেশÑ জানিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আমার দেশকে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত সামরিক, বেসামরিক সব চুক্তি জনগণের কাছে প্রকাশ করা। সেসব চুক্তির মধ্যে যেগুলো জনস্বার্থবিরোধী, সেগুলো বাতিল করা। কিন্তু এ সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাই, চুক্তি বাতিল করা যাবে না। পুরোনো চুক্তি ও প্রকল্প থাকবে, কিন্তু আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব—তা হতে পারে না। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়াতে গুরুত্বারোপ করেন ড. আনু মুহাম্মদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ আমার দেশকে বলেন, সরকারের উচিত ভারত-বাংলাদেশের সব ধরনের চুক্তি পর্যালোচনা করা। কারণ আমরা এখন পর্যন্ত জানি না বিগত সরকার কী চুক্তি করেছে। অথবা ট্রানজিট চুক্তির মধ্যেই-বা কি আছে—সেটিও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ট্রানজিট চুক্তির মধ্যে আছে কি না, সেটি নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা থাকা দরকার।

কী পাচ্ছে বাংলাদেশ

ট্রানজিট নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ২০১২ সালের দিকে প্রথম আলোচনা শুরু হয়। কয়েক বছর দরকষাকষির পর টনপ্রতি ট্রানজিট মাশুল নির্ধারিত হয় ১৯২ টাকা। এর বাইরে টনপ্রতি ৫০ টাকা নিরাপত্তা মাশুল এবং নৌবন্দরে ল্যান্ডিং শিপিং বাবদ টনপ্রতি সাড়ে ৩৪ টাকা মাশুল আছে। সব মিলিয়ে প্রতি টনে প্রায় ২৭৭ টাকা মাশুল পড়ে। এ ছাড়া মাঝনদীতে কার্গো জাহাজ অবস্থানের জন্য আলাদা মাশুল আছে।

ট্রানজিট ব্যবহারে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারে ভারত প্রথম পদক্ষেপ নেয় ২০১১ সালে। ওই বছর আশুগঞ্জ বন্দর দিয়ে প্রথম ট্রানজিটের পণ্য ত্রিপুরায় যায়। তখন ভারত সরকারের বিশেষ অনুরোধে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনে এ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ। পরে এ পথে ট্রানজিট নিয়মিত করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য বলছে, গত সাড়ে আট বছরে সব মিলিয়ে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ৩৩টি চালান গেছে। এর বেশির ভাগই লোহা ও লোহাজাতীয় পণ্য। সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ১৪টি জাহাজের চালানে (ট্রিপ) ১৩ হাজার টনের বেশি ভারতীয় রেলওয়ের লোহাজাতীয় পণ্যের চালান গেছে। তবে পটপরিবর্তনের পর চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে কোনো পণ্য যায়নি। তবে এনবিআর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ট্রানজিট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আয় এসেছে মাত্র ৩৭ লাখ টাকা।

ভারতের স্বার্থে প্রকল্প

ভারতকে ট্রানজিট দিতে বেশ কিছু বিলাসী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে কিছু রয়েছে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) থেকে নেওয়া ঋণে। আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দেয় শেখ হাসিনা সরকার। এজন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে রূপান্তর করা হচ্ছে।

সে লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বন্দরে স্থাপিত হচ্ছে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কার্গো টার্মিনাল ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি কন্টেইনার টার্মিনাল। জমি অধিগ্রহণসহ দুটি প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে কলকাতার নিরাপদ যানবাহন চলাচলে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশে আখাউড়া স্থলবন্দরকে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ভারতীয় কঠিন শর্তের ঋণে পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাংলাদেশের চেয়েও বেশি প্রয়োজন ভারতের। কিন্তু এ প্রকল্পটি করতে গিয়ে ১৯৭৯ সালের সেচ প্রকল্প ধ্বংস করা হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জোর আপত্তি সত্ত্বেও।

ভারতীয় ঋণের টাকায় ট্রানজিটের এ সড়কটি নির্মাণ করতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। ২০০ কোটি ডলারের ভারতীয় দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্প তালিকায় এ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকল্পে এলওসি থেকে পাওয়া যাবে প্রায় দুই হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার নিজে দেবে। যদিও পরে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে পাঁচ হাজার ৭৯১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

ভারতের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের ৪০০ কিলোমিটারের সহজ পথে রেলপথের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ব্যয়ের মাত্র ৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের, বাকি ৪২০ কোটি টাকা ভারত সরকারের লাইন অব ক্রেডিট থেকে পাওয়া (এলওসি) অনুদান। প্রকল্পটির অবকাঠামোসহ সব ধরনের কাজ শেষ হয় গত বছরের জুনে। বেঁচে যায় ১৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের অনুদান বাঁচে ১২৬ কোটি টাকার বেশি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু এ অর্থ বাংলাদেশকে দেওয়া অনুদান। বাংলাদেশ ভারতের কাছে বেঁচে যাওয়া ১২৬ কোটি টাকা অন্য কোনো প্রকল্পে কাজে লাগাতে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ভারত তাতেও রাজি হয়নি।

ভাইবোনের সম্পর্ক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প’কে বিলাসবহুল প্রকল্প উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘এতে আমাদের দেশের কোনো লাভ দেখছি না। কেবল ভারতের স্বার্থেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে আমি তো আর এ প্রকল্প বন্ধ করতে পারব না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওই যে, ভাইবোনের সম্পর্ক বলে একটা কথা আছে না?’ গত বছর ১১ নভেম্বর আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নির্মাণাধীন কার্গো টার্মিনাল ও আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, যারা এ ধরনের অচিন্তিত প্রকল্প চালু করেছিলেন, তাদের প্রশ্ন করা দরকার ছিল যে, কার স্বার্থে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে? এতে আমাদের কী লাভ হচ্ছে? ট্রানজিট আর করিডোর দুটি ভিন্ন জিনিস উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি কী? তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল।’

পটপরিবর্তনে অনিশ্চিয়তায় ট্রানজিট

বন্দরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ দিয়ে ভারতের মালামাল পরিবহনের ট্রানজিট প্রায় বন্ধ। গত ছয় মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করে কোনো ট্রানজিটের পণ্য কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় যায়নি।

এমনকি সিলেটের জকিগঞ্জ দিয়েও ট্রানজিটের মালামাল ভারতের করিমগঞ্জ যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে, বিশেষ করে ত্রিপুরায় পণ্য নিতে কলকাতা-আশুগঞ্জ (নৌপথ), আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা (সড়কপথ)—এ পথেই বেশি আগ্রহ ছিল ভারতের। এ ছাড়া কলকাতা-জকিগঞ্জ (নৌপথ), জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ (সড়কপথ) পথটিও চালু আছে।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা