banglanews
Saturday , 8 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

ভারতের স্বার্থে সীমান্ত হাট

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 8, 2025 10:54 am

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একবার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি তা সারা জীবন মনে রাখবে।’ তার এ উক্তির আরেকটি নজির সীমান্ত হাট। গত ১৪ বছরে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে চালু করা হয়েছে ৮টি বাজার। এতে একতরফা লাভবান হয়েছেন শুধু ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই।

দিল্লির আবদার রক্ষায় সাধারণ মানুষের জমি দখল করে এসব বাজার বানিয়ে দেয় হাসিনা সরকার। তবে যেসব জমির মালিক এতে তাদের শেষ সম্বলটুকু দান করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্ত হাটের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্যের আরও সম্প্রসারণ ঘটেছে বাংলাদেশে। এ বাজারে ভারতীয় ক্রেতাদের ৫ কেজির বেশি পণ্য কিনতে দেওয়া হতো না। তবে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ক্ষেত্রে কোনো সীমা ছিল না। সীমান্ত হাটের মাধ্যমে ভারতের চোরাই পণ্য ও মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।

৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের পর সীমান্ত হাট বন্ধ থাকলেও ফের খোলার প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে এ জাতীয় বাণিজ্য কেন্দ্রের চিন্তা এখন থেকেই বাদ দিতে হবে সরকারকে।

ভারতের আগ্রহে এই কথিত সীমান্ত হাট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। ২০১১ সালে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারি সীমান্তে প্রথম সীমান্ত হাট চালু হয়। এর পরের বছর সুনামগঞ্জের ডলুরায়, ২০১৫ সালের ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের ছয়ঘরিয়ার মধ্যবর্তীস্থানে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে স্থাপিত হয় সীমান্ত হাট।

তখন বলা হয়েছিল, এই হাটের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্তের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদিত পণ্যের আদান-প্রদানে সীমান্তের প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। দু’দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। এমন চটকদার সব স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমান্ত হাট বসানো হয়। আরো ১৬টি বাজার নির্মাণাধীন। জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগের পতন হলে বর্তমানে বাজারগুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে একটি পক্ষ ফের বাজারগুলো চালু করার তৎপরতা শুরু করেছে।

সীমান্ত হাট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বাজারের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারাই কেবল এই বাজারের সুবিধাভোগী হবেন। প্রতিটি বাজারে সুনির্দিষ্ট স্টল বা দোকানের অর্ধেক বরাদ্দ পাবেন বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাকি অর্ধেক ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হবে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুই দেশের প্রশাসনের নজরদারিতে বাজার বসানো হবে। বাজারের ক্রেতারাও প্রশাসনিক পাস গ্রহণের শর্তে প্রবেশ করবেন। একজন ক্রেতা একদিনে সর্বোচ্চ ২শ’ ডলারের বাজার করতে পারবেন। কেবল স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও হাতে তৈরি কুটির শিল্পের ৬০টি ক্যাটাগরির পণ্য বেচাকেনা হবে এই সীমান্ত হাটে।

বাস্তবে এসব নিয়ম কেবল বাংলাদেশিদের জন্যই প্রযোজ্য। ভারতীয়দের জন্য ছিল না কোনো নিয়মের প্রয়োগ। বাংলাদেশ অংশের বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিজিবি, কাস্টমস ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিতেন। তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণেই উৎসাহী ছিলেন তারা।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পুকুরের মাছ, সবজি, শুঁটকি, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্লাস্টিক পণ্য, দড়ি ও টোপকাটা ছাড়া অন্য পণ্য বাজারে তুলতে পারতেন না। বিপরীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে পণ্য তোলায় কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। কসমেটিকস, চকলেট, বেবি ফুড, শাড়ি, থ্রি-পিসসহ বৈধ-অবৈধ এমন কোনো পণ্য নেই যা আসত না সীমান্ত হাটে।

খাতা-কলমে সাধারণ মানুষের জন্য বাজার বসানো হলেও বাংলাদেশ অংশে এই বাজারের ক্রেতা ছিলেন মূলত সরকার সমর্থক মাঝারি মানের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা। নির্ধারিত দিনে এই বাজার থেকে গাড়ি ভরে শুল্কমুক্ত পণ্য কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় বাজারে পাঠাতেন তারা। এজন্য সীমান্তের মানুষের কাছে বাজারগুলো ভারতীয় চোরাই পণ্যের বৈধ হাট নামেই পরিচিতি পায়।

চোরাচালানপ্রবণ এলাকায় অবস্থান

ফেনীর শুভপুর থেকে রাধানগর পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা চোরাচালানীর অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত ছিল। কসমেটিস, শাড়ি, কাপড়, শিশুখাদ্য, আতশবাজি, মোটরসাইকেল, মোটরপার্টস ছাড়াও ফেনসিডিলসহ হরেক রকমের মাদকের চালান আসত এই রুট দিয়ে। ২০১৫ সালের পর থেকে অবৈধ পথে আসা পণ্যের পরিমাণ কমতে থাকে। কারণ বর্ডার হাট দিয়ে বৈধভাবেই এসব পণ্য বিনা শুল্কে আসতে থাকে বাংলাদেশে।

কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তঘেঁষা উপজেলা কসবা দেশের চোরাচালানের প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত। বিজিবির তালিকাভুক্ত ৫০ জনের বেশি শীর্ষ চোরাকারবারি ভারতের পাচারকারীদের সঙ্গে মিলে বিএসএফের সহায়তায় অবৈধ পণ্য আনত বাংলাদেশে। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযান চালানো হতো নিয়মিত। কিন্তু সীমান্ত হাট চালুর পর আর অভিযান চালানোর প্রয়োজন হয়নি। কারণ কথিত বৈধ পথেই সব পণ্য আসত বাংলাদেশে।

বিজিবি ১০ কুমিল্লা ব্যাটেলিয়নে কর্মরত বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সতর্ক পাহারার কারণে দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল চোরাকারবারিদের অপতৎপরতা। মূলত ভারতীয় চোরাকারবারিদের সুবিধা দিতেই সে দেশের সরকারের চাহিদা অনুযায়ী এই বাজারগুলো চালু করা হয়। আইন অনুযায়ী সীমান্ত হাটের পণ্য বর্ডারের ৫ কিলোমিটারের বাইরে আসার সুযোগ নেই। তবে আওয়ামী সরকারের অলিখিত নির্দেশনায় সীমান্ত হাটের কোনো পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সুযোগ ছিল না ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে। চোরাকারবারিরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বর্ডার হাটের ভাউচার নিয়ে চোরাই পথে আনা অন্য পণ্যও ছড়িয়ে দিয়েছে দেশজুড়ে।

পরিচালনায় বৈষম্য

নীতিমালা অনুযায়ী দুই দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথভাবে বাজার পরিচালনার কথা থাকলেও মূলত ভারতের নিয়ন্ত্রণেই চলত বাজার। বাংলাদেশি ক্রেতাদের অবাধ যাতায়াত থাকলেও ভারতীয় ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করত সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতের গেটে স্কেল বসিয়ে রেখেছিল তারা। কোনো ক্রেতা ৫ কেজির বেশি পণ্য কিনতে পারতেন না বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। অথচ বাংলাদেশি ক্রেতারা অবাধে গাড়ি ভরে পণ্য কিনতেন। বাংলাদেশ অংশে বাজারের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের লোকজনও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষেই থাকতেন। বাজার বসানোর সময় তল্লাশি করে পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো। অনুমোদিত ক্যাটাগরির বাইরের কোনো পণ্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বাজারে তোলার অনুমতি না পেলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তা মানা হতো না।

ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটের ১ নম্বর স্টলের মালিক আতাউর রহমান সীমান্ত হাটের জমিদাতা ক্যাটাগরিতে দোকান বরাদ্দ পান। ২০১৫ সালের শুরুতে প্লাস্টিক পণ্য নিয়ে দোকান শুরু করেন তিনি। এসব পণ্যের বেশ চাহিদাও ছিল ভারতীয় ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু ভারতীয় বাজার কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য কিনে নিয়ে যেতে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করত। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক পণ্যের আইটেম বাদ দিয়ে মুদি দোকান শুরু করেন তিনি। আতাউর জানান, ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে মোট ৫৪টি দোকান ছিল এর মধ্যে ২৭টি বাংলাদেশের বাকি ২৭টি ভারতের। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাজার বসত। তবে দোকানের মালিকরা এক ঘণ্টার আগে প্রবেশ ও একঘণ্টা পরে বেরোনোর অনুমতি পেত। বাজার শুরুর আগে অনেক লোভনীয় প্রচারণা থাকলেও বাজার বসানোর পর থেকে সবকিছুই ফিকে হয়ে আসে। এ বাজারে একতরফা লাভবান হয় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

এই বাজারের ১১ নম্বর স্টলের মালিক ফজলুর রহমান জানান, আগে যেসব পণ্য চোরাই পথে দেশে ঢুকত, বাজার চালু হওয়ার পর সেগুলোই কথিত বৈধ উপায়ে বাংলাদেশের বাজারে চাপিয়ে দিত ভারত। ক্রেতা সেজে বাজারে ঢুকে প্রকাশ্যে লেনদেন করত মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চোরাকারবারীরাও। সীমান্ত হাটের রসিদ দেখিয়ে অবাধে পরিবহন করা হতো ভারতীয় চোরাই পণ্য।

বাজারের পাশের গ্রাম মুচির দীঘির বাসিন্দা বখতিয়ার উদ্দিন রিপন জানান, তাদের গ্রামের পাশের বাজার হলেও সাধারণ ক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করতে পারতেন না। আগে যারা চোরাকারবার করতেন তারাই ছিলেন এই বাজারের বৈধ ক্রেতা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে গাড়িতে করে মানুষ আসতেন বর্ডার হাটে। পুরো এলাকায় দুজন দোকান বরাদ্দ পেয়েছিলেন। বাকি ২৫ জনই ছিলেন ফেনী সদরের। অথচ নিয়মানুযায়ী সীমান্তের ৫ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরের কেউ এই বাজারে প্রবেশাধিকারই পাওয়ার কথা নয়।

বর্ডার হাট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পুরো এলাকায় সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়েছে বলে জানান বখতিয়ার উদ্দিন। তিনি বলেন, চোরাই পণ্যের পাশাপাশি মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।

সাধারণ মানুষের জমি দখল

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় মোকামিয়া গ্রামে সীমান্ত হাটের পাশেই মাটির একটি ঘরে প্রতিবন্ধী স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের বাস। বসতবাড়ি মিলিয়ে ২০ গণ্ডা জমির মালিক তিনি। এর মধ্যে ১৭ গণ্ডাই দখল হয়ে গেছে সীমান্ত হাটের কাজে। বাজার তৈরির সময় দুটি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শহিদুল ইসলাম ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রবিউল হক চৌধুরী মাহবুব। তবে তারা ওয়াদা রক্ষা করেননি। এরপর জমি ফেরত কিংবা ক্ষতি পূরণের আশায় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি তার। এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পাননি তিনি।

একই এলাকার নুর হোসেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তারের ৭ শতক জমির পুরোটাই দখল হয়েছে বর্ডার হাটে। সহায়-সম্বল হারিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি এখন চট্টগ্রামে থাকেন। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি তিনি।

এই এলাকার আহম্মেদ হোসেন মাস্টার, আজগর হোসেন, আহম্মদ করিম, আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্দুল ওয়াদুদ মোল্লা, রুহুল আমিন, শাহ আলম, বিবি আয়শা ও শামসুল করিমের জমিও দখল করা হয়েছে ছাগলনাইয়া বর্ডার হাটের জন্য। তাদের মধ্যে ৪ জনকে অন্য জায়গায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে খাস জমি দেওয়া হয়েছে। বাকিরা পায়নি কিছুই। কিন্তু সরকারি নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রীয় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হলে মৌজা মূল্যের তিনগুণ টাকা দিতে হয়।

সাধারণ মানুষের জমি ম্যানেজ করে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা রাধানগর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান রবিউল হক চৌধুরী মাহবুব জানান, ভারতের তাগিদে দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্ডার হাট স্থাপনের নির্দেশনা দেয় সরকার। হাটের জন্য জায়গা নির্ধারণও ভারতই করে দেয়। তড়িঘড়ি করে বাজার স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া মানা সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্দেশে ২০১৩ সালে ইউএনও কার্যালয়ে ভূমির মালিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে অন্য জায়গায় সমপরিমাণ জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার লিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু যাদের প্রভাব আছে তারাই সেই জমির বন্দোবস্ত পেয়েছেন। আর যারা সরকারি দপ্তরগুলোতে ধরনা দিতে পারেননি তারা কিছুই পাননি।

ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, সীমান্ত হাটের জন্য আন্তর্জাতিক কিছু নিয়মনীতি আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওই নীতি মেনেই সীমান্ত হাট পরিচালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের হাটগুলোতে তা অনুসরণ করা হয়নি। বিগত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে একতরফা সুবিধা পেয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ সিকান্দার খান জানান, সমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এমন বাণিজ্য হতে পারে। কিন্তু ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির সামঞ্জস্য নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমান নয়। তাই এমন অসম বাণিজ্যে ছোট অর্থনীতির দেশ নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে এ জাতীয় বাণিজ্য কেন্দ্রের চিন্তা এখন থেকেই বাদ দিতে হবে সরকারকে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহীদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, মূলত ভারতের আগ্রহেই মিয়ানমার, চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে এই সীমান্ত হাট প্রকল্প শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি, চায়নার সঙ্গে দুটি ও বাংলাদেশের সঙ্গে চারটি হাট দিয়ে পাইলট প্রজেক্ট শুরু করে ভারত। মিয়ানমার ও চায়না আর না এগোলেও অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে এই প্রকল্পের বিস্তার ঘটে। ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, তিস্তা, ফারাক্কাসহ সব চুক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি চুক্তিই ভারতের স্বার্থে করা হয়েছে। বর্ডারহাটও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব হাট বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ জানান, সীমান্ত হাটগুলো যেসব এলাকায় রয়েছে প্রতিটি এলাকায় চোরাচালানের প্রবণতা বেশি ছিল। হাটগুলোর কার্যক্রম শুরুর পর চোরাই পণ্য বৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল। এটি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। কারণ এসব বাজারে দিনভর কী পণ্য বিক্রি হচ্ছে কী ধরনের মানুষ সেখানে আসা-যাওয়া করছে তার সঠিক কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা ছিল না। আর এই কারণেই সীমান্ত হাটকে কেন্দ্র করে দুই দেশের চোরাকারবারিদের শক্ত ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল।

প্রশাসনের বক্তব্য

ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা জানান, তিনি নতুন এসেছেন। তাই বর্ডার হাট সম্পর্কে পুরোনো কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তিনি এতটুকুই জানেন যে, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার এক চিঠিতে নিরাপত্তার কারণে আপাতত সীমান্ত হাটের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী হাটের কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী চিঠি না আসা পর্যন্ত হাটের বাংলাদেশ অংশের গেট বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা