banglanews
Monday , 10 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

১১ ব্যাংকের কাছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 10, 2025 9:41 am

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাড়ে ১৫ বছরে ডজনখানেক ব্যাংকে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে ঋণের নামে কয়েকটি শিল্পগ্রুপ বের করে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

ফলে ব্যাংকগুলো এখন চরম তারল্য সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় এসব ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হয়েছে। গত সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সব মিলিয়ে ১১টি ব্যাংককে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংককে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে জামানত ছাড়াই। তারল্য সংকট কাটাতে অর্থ দিলেও ব্যাংকগুলো এখনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

ব্যাংকগুলোকে কীভাবে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি কী- তা আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলমের হাতে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলো তার নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, গত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের ক্ষত লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে ২০২২ সালের শেষদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির খবর গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে। তখন ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক অর্থ তুলে নেন। এতে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকগুলো বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য সংরক্ষণ হিসেবে সিআরআর এবং সরকারি সিকিউরিটিজ হিসেবে এসএলআর রাখতেও ব্যর্থ হয়। এরপরও ব্যাংকগুলোকে নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখেন তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকের একটি চলতি হিসাব থাকে। এ হিসাব থেকে ব্যাংকের বিধিবদ্ধ নগদ তারল্য সংরক্ষণ হিসেবে সিআরআর এবং সরকারি সিকিউরিটিজ হিসেবে এসএলআর রাখতে হয়। আবার আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিষ্পত্তি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া পুনঃঅর্থায়নসহ যাবতীয় লেনদেন হয় এ হিসাব থেকে।

সাধারণভাবে সিআরআর এবং এসএলআরে ঘাটতি হলেও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। তবে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ ছিল- এমন ব্যাংকগুলোতে ঋণযোগ্য তহবিল শেষ হওয়ার পর সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ বেআইনিভাবে লেনদেনের সুযোগ দেন। ২০২২ সালের শেষদিকে শরিয়াহ্‌ভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক করে লেনদেনের নতুন এ উপায় বের করা হয়। গত সরকারের আমলে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক রেখে বিনা বাধায় লেনদেন করছিল ব্যাংকগুলো।

তবে সরকার বদলের পর নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নিয়ে বেআইনি সব সুবিধা বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে আগের মতো টাকা ছাপিয়ে না দেওয়ার ঘোষণাও দেন। যদিও এই সিদ্ধান্তে বেশিদিন অটল থাকতে পারেননি তিনি। কারণ, চলতি হিসাবে ঘাটতি ও টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়া বন্ধ করা হলে গ্রাহককে টাকা দিতে হিমশিম খায় ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর শাখায় শাখায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হলে আবারও নতুন করে টাকা ছাপিয়ে এবং গ্যারান্টির আওতায় টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী আমার দেশকে বলেন, বিগত সময়ে একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। যার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তৎকালীন সরকার। এই চক্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন। তাদের মাধ্যমে কিছু ব্যাংক থেকে লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের চালাতে হচ্ছে। তাদের যেসব টাকা ধার দেওয়া হয়েছে, তা ফেরত আসবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এসব অনিয়মে যুক্ত সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তিন পদ্ধতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিয়েছে। সরাসরি টাকা ছাপিয়ে, ভালো ব্যাংক থেকে গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা ধার এবং চলতি হিসাবে ঘাটতির বিপরীতে ধার। তথ্য অনুযায়ী, টাকা ছাপিয়ে ২৭ হাজার ৪১০ কোটি টাকা, চলতি হিসাবে ঘাটতি রেখে ১৮ হাজার ৩৩৪ কোটি এবং গ্যারান্টির আওতায় ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। চলতি হিসাবে ঘাটতির পুরো অর্থই দেওয়া হয় পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়।

কোন ব্যাংকের কাছে কত পাওনা

বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ধার দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। এই ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতির বিপরীতে ধার রয়েছে ৭ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, গ্যারান্টির আওতায় এক হাজার ৫০ কোটি ও টাকা ছাপিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতির বিপরীতে ৩ হাজার ৩৯৮ কোটি, গ্যারান্টিতে ১ হাজার ১৭৫ কোটি এবং টাকা ছাপিয়ে ৪ হাজার কোটি। ন্যাশনাল ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতির ধার ২ হাজার ৩৭০ কোটি, গ্যারান্টির ৯৮৫ কোটি ও টাকা ছাপিয়ে ধার পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ও গ্যারান্টির আওতায় ধার যথাক্রমে ২ হাজার ৩০৮ কোটি ও ২ হাজার ৩৯৫ কোটি। ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতিতে ধার ২ হাজার ২০৯ কোটি, গ্যারান্টিতে ৪০০ কোটি এবং টাকা ছাপিয়ে দুই হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতির বিপরীতে ধারের পরিমাণ ৪০৬ কোটি ও ছাপিয়ে দেওয়া হয় ২০০ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতির বিপরীতে ধারের পরিমাণ ২৩৫ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি ৯৭ কোটি ও টাকা ছাপিয়ে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতির বিপরীতে ধারের পরিমাণ ৪১ কোটি, গ্যারান্টিতে ২৯৫ কোটি এবং ছাপিয়ে দেওয়া হয় দুই হাজার কোটি টাকা ধার। এক্সিম ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি না থাকলেও গ্যারান্টির আওতায় ধার রয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি এবং টাকা ছাপিয়ে দেওয়া ধারের পরিমাণ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয় ২০০ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ার পর কতটা উন্নতি করেছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা ছিল ম্যানেজমেন্ট ক্রাইসিস। ম্যানেজমেন্ট ব্যাংকগুলোর অনিয়ম বন্ধে ভূমিকা নেয়নি বরং সহায়তা করেছে। এজন্যই নতুন বোর্ড দেওয়া হয়েছে। তারাই এখন দেখভাল করছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদারকি করছে। যদি হস্তক্ষেপ করা লাগে, তবে করবে।

ব্যাংকগুলো সংকট কাটাতে না পারলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ব্যাংকগুলো সংকট কাটাতে না পারলে সেটা শেষ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা