banglanews
Monday , 10 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

নিয়মের ফায়দা লুটছে স্বাস্থ্য মাফিয়া

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 10, 2025 10:00 am

গোড়াতেই গলদ থাকায় স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় বেশুমার দুর্নীতি হচ্ছে। শুধু ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দিয়ে নামসর্বস্ব কাগুজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করে অংশ নেওয়া যায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম সরবরাহের দরপত্রে। আর এই সুযোগ ঘুরেফিরে নির্দিষ্ট কিছু ‘মাফিয়া’ গোচরের লোক কাজ পায় স্বাস্থ্য খাতে। তাদের কাছে ভয়াবহভাবে জিম্মি হয়ে থাকে পুরো স্বাস্থ্য খাত। সরকার যায়, সরকার আসে, মন্ত্রী, সচিব, ডিজির বদল হয়; কিন্তু ভয়ানক মাফিয়ারা থেকেই যায়। তারা শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে। বাসার কাজের বুয়া, গার্ড, অফিস পিয়ন, কাছের-দূরের আত্মীয় বিভিন্ন নামে ট্রেড লাইসেন্স করে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঘুষ ও কমিশনের বিনিময়ে তাদের সহযোগিতা করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অসাধু একটি চক্র। কোনো কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে গেলে তাকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ছাড়তে হয় নানা অপমানের দায় নিয়ে। এই চক্রটি এতই শক্তিশালী যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গোয়েন্দা সংস্থা, মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য কোনো প্রশাসনও তাদের কিছুই করতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ে অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় তেমন কোনো নীতিমালা নেই। ব্যবসার অনুমতিপত্র বা ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেই দরপত্রে অংশ নেওয়া যায়। দরপত্রের শর্ত পূরণ হলেই যে কেউ ওষুধ, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, হাসপাতালের পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করতে পারেন। তবে অবকাঠামো তৈরি ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সরবরাহের ক্ষেত্রে বিদেশি ওই যন্ত্রের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের (ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি) মনোনীত প্রতিনিধি হওয়ার শর্ত রয়েছে। এখানেও আছে ভয়ানক কারসাজি। বিদেশি উৎপাদকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথভাবে (জয়েন ভেঞ্চার) কাজ করার সাজানো চুক্তিপত্র উপস্থাপন করে অযোগ্য অনেক সরবরাহকারী হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে। এতে বছরের পর বছর স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনাকাটা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও তার সুফল পায়নি মানুষ। বন্ধ হয়নি দুর্নীতি, বরং লাগামহীনভাবে সেটা বেড়েই চলছে। বছরের পর বছর ধরে খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন যন্ত্র কেনাকাটা কিংবা পণ্য সরবরাহ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে নেওয়ার ফিরিস্তি। এতে সরকারি অর্থ লোপাট হচ্ছে সাধারণ মানুষ তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণি ও স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলেও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত বিধিমালা ২০০৮ (পিপিআর) অনুসরণ করা হয়। সরকারের কেনাকাটায় একটি অভিন্ন বিধিমালা (পিপিআর) রয়েছে, তার আলোকে দরপত্র আহ্বান করে প্রতিটি সরকারি দপ্তর। স্বাস্থ্য খাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। এতে দরপত্রের শর্ত ও পিপিআর অনুসরণ করে যোগ্যরা পণ্য সরবরাহের সুযোগ পায়। তবে বিশেষ দরপত্রে (মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো) অংশ নিতে হলে বিভিন্ন সনদপত্র ও ছাড়পত্র থাকতে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুসরণ করে সরকারের অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মতো দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের শর্ত পূরণ যারা করতে পারেন, শুধু তারা যোগ্য বলে বিবেচিত হন কিংবা কাজ পেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় বিশেষ কোনো নীতিমালা নেই।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সরবরাহকারী হিসেবে নাম লেখাতে চাইলে প্রথমে ওই দপ্তরে তালিকাভুক্ত করতে হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্রও গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে শুধু ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই দরপত্রে সরবরাহকারী হিসেবে অংশগ্রহণ করা যায়। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে একের পর এক ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে কাজ হাতিয়ে নেয়। অভিজ্ঞ সরবরাহকারীর ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজের চুক্তিপত্র উপস্থাপন করে আমলাদের সঙ্গে যোগসাজশে বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়া হয়।

যার ফলে মানহীন পণ্য সরবরাহের ঘটনা স্বাস্থ্য খাতে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব অসাধু ব্যক্তির দৌরাত্ম্য বন্ধে স্বাস্থ্য খাতে একটি লাইসেন্সিং বোর্ড গঠন ও পর্যালোচনার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, এটা করা না গেলে স্বাস্থ্য খাতে মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সরবরাহ সম্ভব হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. জয়নাল আবেদীন টিটো কালবেলাকে বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দরপত্র নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একটি দল অধিদপ্তর থেকে কেনাকাটা-সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে গেছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর এখন পর্যন্ত আমার বিভাগে নতুন করে কোনো কেনাকাটা হয়নি। এর আগের কেনাকাটা সংক্রান্ত বিষয়ে আমার জানা নেই।’

কেনাকাটার নীতিমালার শিথিলতার সুযোগে গত ১৬ বছর একটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য খাতে রামরাজত্ব কায়েম করে বলে অভিযোগ ওঠে। গত ১৬ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তন হলেও ভাঙেনি সিন্ডিকেট। ঘুরেফিরে কয়েকজন ঠিকাদার পণ্য সরবরাহ করে আসছিলেন। ২০২০-২১ সালে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটার এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সরবরাহের বিষয়টি ফাঁস হলে দুদকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপরও সিন্ডিকেট ভাঙেনি। নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও কেনাকাটার নামে হরিলুটে অংশ নেয়। চার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত কমিশনে কাজ বাগিয়ে নিত চক্রটি। সবকিছু জেনেও নির্বিকার ছিল নিয়ন্ত্রক প্রশাসন।

অভিযোগ আছে, ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রুহুল হক। তার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে তার আগে বিএনপির আমলে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুসহ একটি চক্র। রুহুল হকের পর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তার ব্যক্তিগত সহকারী, কয়েকজন আত্মীয় ও স্বাস্থ্য খাতের আমলারা। সেখানেও ছিল মিঠু চক্রের আধিপত্য। ওই সময় নাসিমের ঘনিষ্ঠদের ছত্রছায়ায় স্বাস্থ্যের মাফিয়া চক্রের পরিধি বাড়ে। যোগ দেন নতুন কয়েকজন গডফাদার। নাসিমের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান জাহিদ মালেক। তিনিও একই চক্রের সহযোগী হয়ে পড়েন। কমিশনের বিনিময়ে কাজ বাগিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকপুত্র রাহাত মালেক শুভ্র। তার সহযোগী ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এবং হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের লাইন ডিরেক্টর মাজহারুল ইসলাম তপন। এই চক্রের হাত ধরে বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, মুন্সী সাজ্জাদসহ আরও কয়েক গডফাদার। তারা পুরো স্বাস্থ্য খাত নিজেদের কবজায় নিয়ে নেন। তারা ঠিকাদারি কাজের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিয়ে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নিতে থাকেন। ওই কমিশনের ১০ থেকে ১২ শতাংশ দিতে হতো রাহাত মালেক শুভ্রকে। তিনি ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সদস্যদের ম্যানেজ করতেন। কমিশনের বাকিটা আমলারা ভাগবাটোয়ারা করতেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোল পাল্টে এই চক্রের অনেকে আওয়ামী লীগ আমলের ‘বঞ্চিত’ ও বিএনপির লোক পরিচয় দিচ্ছেন। গত ৫ আগস্টের পর এখনো সেভাবে কেনাকাটা শুরু হয়নি স্বাস্থ্য খাতের। তথ্য বলছে, কেনাকাটা শুরুর আগেই ফের সক্রিয় পুরোনো সিন্ডিকেট। তাদের মধ্যে অনেকে সরকার ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘রাহাত মালেক শুভ্রর নেতৃত্বে স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল দুষ্টচক্র। তার সহযোগী ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন ও অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তারা প্রথমে প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। মন্ত্রী বদলের সঙ্গে তারাও পাল্টে যেতেন। নতুন করে ভোল পাল্টে বিএনপি হওয়ার চেষ্টা করছেন। চক্রে আরও ছিলেন স্বাস্থ্য খাতের ডনখ্যাত টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, ওএমসি হেলথ কেয়ারের সিইও মাজবাহুল কবির, জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস লিমিটেডের এমডি আবদুর রাজ্জাক ও মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর চক্রটি চলতি অর্থবছরের কেনাকাটা ঘিরে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে তৎপর বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটা করত কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। তবে করোনাকালে অন্তত ৫১ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারি আইন ও বিধি না মেনে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করে। ওই কেনাকাটায় গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় দায়িত্ব নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কেনাকাটার নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছর মোট ৭২টি দরপত্রে ৩১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি চিকিৎসা যন্ত্র কেনা হয়। ঘুরেফিরে ২৪টি প্রতিষ্ঠান এসব কাজ পেয়েছে। যার নিয়ন্ত্রণ ছিল শুভ্র-তপন চক্রের হাতে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সরকার কিংবা বিরোধীদলীয় যেই হোক না কেন, শুভ্র-তপন চক্রকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন না দিয়ে কেউ কাজ পায়নি। শুধু তাই নয়, তারা দুর্নীতি, প্রতারণার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকেও কাজ দিয়েছে দেদার। করোনাকালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জালিয়াতির মাধ্যমে নাম বদলে এখনো ঠিকাদারিতে সক্রিয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তার হলেও দমেনি ব্যবসা।

জানা যায়, স্বাস্থ্য খাতের ডনখ্যাত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মিঠু। সেখানে বসেই তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। ২০১৬ সালের ৯ মে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেসার্স কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারী হিসেবে মিঠুর নাম আসে। তার টেকনোক্র্যাট লিমিটেড কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হয়। এরপর তিনি আত্মীয়স্বজনসহ নামে-বেনামে অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করেন। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুদক অনেক অনুসন্ধান করলেও মিঠু রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করায় বক্তব্য জানা যায়নি। দেশে মিঠুর ব্যবসা দেখভাল করছেন বড় ভাই মোকছেদুল ইসলাম। একাধিকবার কল দিলেও সাড়া দেননি। মিঠুর নামে-বেনামে ও আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবের নামে কমপক্ষে ৩০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, মিঠুর প্রতিষ্ঠানগুলো দেড় দুই বছরের বেশি কাজ করে না। প্রতি অর্থবছরে নতুন নতুন নামে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেন তিনি। মিঠুর স্ত্রী নিশাত ফারজানা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বড় ভাইয়ের নামে রয়েছে সিআর মার্চেন্ডাইজ ও এলআর এভিয়েশন নামে দুটি ঠিকাদারি লাইসেন্স। মিঠুর ভাবির নামে রয়েছে জিইএফ অ্যান্ড ট্রেডিং। ভাগ্নের নামে রয়েছে ট্রেড হাউস। ভাগ্নের স্ত্রীর নামে আছে মেহেরবা ইন্টারন্যাশনাল। আত্মীয়দের নামে আরও আছে ক্রিয়েটিভ ট্রেড, ফিউচার ট্রেড, লেক্সিকোন আইটি প্রাইভেট লিমিটেড, টেকনো ট্রেড, বেলএয়ার এভিয়েশন, জিইএস অ্যান্ড ট্রেডিং, হ্যাভ ইন্টারন্যাশনাল, লেসিকন হসপিটালিটি, নর্থ টেক এলএলসি লিমিটেড, থ্রি-আই মার্চেন্ডাইজিং, ইনসেনারিটি লিমিটেড। মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেড নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিও মিঠুর একটি বেনামি প্রতিষ্ঠান বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য খাতের আরেক মাফিয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ঝন্টু মুন্সী। নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে অধিদপ্তরের প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তারা আলোচিত মিঠুবিরোধী সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সরঞ্জাম সরবরাহ না করে বিল তুলে নেওয়া, নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ ও ৪০ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে এই চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়ক।

স্বাস্থ্য খাতের আরেক মাফিয়া ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রামের মোল্লা পরিবারের সন্তান মো. আফতাব আহমেদ। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর রাতারাতি বনে যান ঠিকাদার। তিনি মেসার্স এএসএল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালো তালিকাভুক্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স এএসএল একটি।

স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় অন্যতম মাফিয়া এইচএসএমের সাবেক লাইন ডিরেক্টর (বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান) ডা. মাজহারুল হক। নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের পর বিভিন্ন সময়ে কাজ দেওয়া হয়েছে। কমিশন নিয়ে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্য সাবেক লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে আত্মগোপনে থাকায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তার ছেলের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা