banglanews
Saturday , 22 February 2025 | [bangla_date]
  1. আইন-আদালত
  2. আপনার জন্য
  3. আলোচিত সংবাদ
  4. একটু থামুন
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জীবনযাপন
  8. জেলা সংবাদ
  9. ডাক্তার আছেন
  10. দুর্নীতি
  11. ধর্ম ও জীবন
  12. নির্বাচিত কলাম
  13. প্রবাস জীবন
  14. প্রযুক্তি
  15. বাণিজ্য

চাকরির খোঁজে ঢাকায় আসা তরুণকে জঙ্গি নাটকে খুন

প্রতিবেদক
নিউজ ডেক্স
February 22, 2025 9:54 am

পুলিশের গুলি ছোড়ার পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। আবাসিক হোটেলটির চারতলার দেওয়াল ধসে পড়ে রাস্তায়। এরপর মুহুর্মুহু গুলির শব্দে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

কিছুক্ষণ পর ক্ষতবিক্ষত এক তরুণের নিথর দেহ দেখিয়ে পুলিশ দাবি করে, আত্মসমর্পণ না করে ‘সুইসাইড ভেস্টে’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে এই জঙ্গি।

তবে নিহত সেই তরুণের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা আমার দেশকে বলেন, পরিবারকে জানিয়েই সাতক্ষীরা থেকে চাকরির খোঁজে ঢাকায় এসেছিল সে।

সেই দিনটি ছিল ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ঘিরে যখন আওয়ামী লীগ সরকার শোক দিবস পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তার আগমুহূর্তে সেখান থেকে ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে জঙ্গি অভিযানের নামে এ ঘটনাটি ঘটানো হয়।

অবশ্য আগের রাত থেকেই ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ নামের ওই অভিযানটি চালিয়েছিল পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও সোয়াট সদস্যরা। সেই অভিযানে সাইফুল ইসলাম নামের নিহত তরুণটি ছিলেন খুলনার বিএল কলেজের শিক্ষার্থী।

তবে যেই শেখ হাসিনাকে খুশি করতে এই ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানো হয়েছিল, তিনি অবশ্য এই ঘটনায় নাখোশ হয়েছিলেন। কারণ কথিত ‘জঙ্গি নাটকের মঞ্চটি’ ৩২ নম্বরের কাছাকাছি ছিল। ‘সফল অভিযানের’ কৃতিত্ব নিতে দলবল নিয়ে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।

তাকে দেখে হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘এত কাছাকাছি জঙ্গি এনে অপারেশনের নাটক না করলেই পারত।’ সেই অভিযান নিয়ে শেখ হাসিনার সন্দেহ প্রকাশের বিষয়টি শহীদুল হক নিজেই বলেছেন ২০২২ সালে লেখা তার ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি : স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইতে।

সাত বছর আগের সেই ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আমার দেশ জানতে পেরেছে, এই জঙ্গি নাটক জায়েজ করতে পরবর্তী সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আসামি করা হয়। তবে এ আসামিদের মধ্যে কয়েকজনকে ঘটনার আগেই গুম করা হয়। এমনকি আসামিরা একে অন্যের সঙ্গে পূর্বপরিচিতও ছিল না।

বয়সের মিল বা পেশাগত সদৃশও ছিল না তাদের মধ্যে। জঙ্গি সেই নাটক বাস্তবে প্রমাণ করতে স্বীকারোক্তি আদায়ে আসামিদের ওপর চালানো হয় চরম নির্যাতন, হুমকি দেওয়া হয় ক্রসফায়ার ও আগুনে পুড়িয়ে মারার। এই নির্যাতন থেকে বাদ পড়েনি অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও ছাত্ররাও।

আত্মঘাতী নাকি হত্যা

নিহত সাইফুলের বাবা আবুল খায়ের মোল্লা ১১ ফেব্রুয়ারি আমার দেশকে টেলিফোনে বলেছেন, ঘটনার মাত্র ছয়দিন আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকায় চাকরির জন্য গিয়েছিল তার ছেলে। ১৫ আগস্ট সকালে স্থানীয় পুলিশ তার বাসায় গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। থানার টিভিতে তিনি ঘটনাটি দেখতে পান। তিনি বলেন, তার ছেলেকে জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।

মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশের দাবি ছিল, আসামি সাইফুল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়। বিস্ফোরণে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ভবনের দেওয়াল ও বারান্দার গ্রিল উড়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। রুমের দেওয়াল ভেঙে যায় ও লোহার ফ্যান দুমড়েমুচড়ে যায়। কিন্তু মামলার নথিপত্র ঘেঁটে পদে পদে পুলিশের এমন দাবির অসাড়তা উঠে এসেছে। মামলার জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল থেকে সাইফুলের জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার ব্যবহৃত ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পুলিশের দাবি অনুযায়ী ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ভবনের দেওয়াল ও বারান্দার গ্রিল উড়ে রাস্তায় পড়ে গেলেও সাইফুলের সঙ্গে থাকা টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও কয়েকটা মোবাইল অক্ষত ছিল। আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা পুলিশের এসআই ইমরুল সাহেদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশের দাবি করা সাইফুলের যে ব্যাগে বোমা ছিল সেটি বিস্ফোরিত হলেও সেই ব্যাগের শুধু একপাশে একটু ছেঁড়া ছিল। মামলার নথিপত্রে ঘটনাস্থলের ভয়াবহতার সঙ্গে জব্দ তালিকার এমন বৈসদৃশ এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পুলিশের সাজানো নাটকেই সেই তরুণকে জঙ্গি তকমা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একে অন্যকে চিনতেন না

রাজমিস্ত্রি থেকে শুরু করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী, প্রকাশক, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার, নও মুসলিম ব্যক্তি ও গ্রামের গৃহবধূ- কেউই বাদ যায়নি সিটিটিসির সেই জঙ্গি নাটকের নির্মমতা থেকে। গুম করার পর গোপন কারাগারে তাদের ওপর নেমে এসেছিলে ভয়াবহ নির্যাতন।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ আগেই গুম ছিল। পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগÑ গুম করে নির্মম নির্যাতনের পর তাদের সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয়। অভিযুক্তরা আমার দেশকে নিশ্চিত করেছেন, এ ঘটনার আগে তারা একে অন্যকে চিনতেন না। এমনকি পুলিশের তদন্তেও একে অন্যের অতীতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি।

মামলার ১ নম্বর আসামি আকরাম হোসেন খান নিলয় মালয়েশিয়ার লিমকোয়িং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তাকে বাংলাদেশেই চার মাস গুম রাখা হয় এবং পরে তার বাবা আবু তুরাব খান, মা সাদিয়া হোসনা লাকী ও বোন তাজরীন খানম শুভকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দীর্ঘ এক বছর কারাবাসের পর হাইকোর্ট থেকে তারা জামিন পান। পরে আবু তুরাব খানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আবু তুরাব খান আমার দেশকে জানান, ‘আমার জামাতা মুশফিক উস সালেহীন, তার শিশুপুত্র ও আমাদের বাসার কাজের মেয়েকেও গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

মামলার ২ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান ওরফে মামুনকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল থেকে গুম করা হয়। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এতে জড়িত ছিল। ওলিও হোটেলের ঘটনার সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। আরেক আসামি তারেক মোহাম্মদ আদনানকে ২০১৭ সালের ৭ জুলাই গুম করা হয়। এ নিয়ে তার পরিবার একটি জিডিও করেছিল।

মামলার আরেক আসামি তানভীর ইয়াসিন করিম প্রকাশনা সংস্থা ‘করিম ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘দারুস সালাম পাবলিকেশনস’-এর কর্ণধার ছিলেন। ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর গুলশানের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় সিটিটিসি। ১১ দিন গুম করে রাখার পর গণমাধ্যমে হাজির করা হয়। অথচ ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিয়েছিল। সাধারণত কারো বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক প্রমাণ না থাকলে পুলিশ থেকে এ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

এ ছাড়া রাজমিস্ত্রি কামরুল ইসলাম শাকিলকে ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে তুলে আনা হয়। একই সময় কক্সবাজারের এক নও মুসলিম দন্তচিকিৎসক আব্দুল্লাহকেও গুম করা হয়।

আরেক আসামি আবুল কাসেমকে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর চন্দ্রকোনা বাজার থেকে ডিবি তুলে নিয়ে যায়। মামলার অন্য আসামি মো. আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক (৪১), লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রিকেও নিজ নিজ এলাকা থেকে গুম করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে ‘জঙ্গি কার্ড’ ব্যবহারে সামনের কাতারে ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। ২০১৬ সালের পর থেকে দেশে যত বড় বড় ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হয়েছে, তার বেশিরভাগই শহীদুল ও তার ঘনিষ্ঠ লোকজন চালিয়েছিল। শহীদুলের ছত্রছায়ায় এসব অভিযানের বেশিরভাগের নেতৃত্বেই ছিলেন পলাতক মনিরুল ইসলাম (সিটিটিসি ও এসবির সাবেক প্রধান), বগুড়ার সাবেক এসপি আসাদুজ্জামান (পরে সিটিটিসি প্রধান) এবং তার ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত বগুড়ার তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডলসহ সিটিটিসির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগীদের অনেকেই এসব কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে এরই মধ্যে গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে অভিযোগ দিয়েছেন।

শিশুসহ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গুম, কারাগারে সন্তান প্রসব

রাজমিস্ত্রি কামরুল ইসলাম শাকিলের স্ত্রী রাশিদা খাতুনের গুমের ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তাকে তার দুই বছরের শিশু মুয়াজসহ গুম করা হয়। তিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডিবির সদস্যরা তার স্বামীকে না পেয়ে তাকে ও শিশুটিকে বগুড়া ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তার পরিবারের কেউই জানত না তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল।

১৫ দিন গুমের পর ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই রাশিদা খাতুনকে একটি পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি পরিবারকে তার অবস্থান জানাতে সক্ষম হন। আট মাস কারান্তরীণ থাকার সময়ে তার দ্বিতীয় সন্তান মুসআব জন্ম নেয়। রাশিদা খাতুন জানান, তার স্বামীকে পাঁচটি ও তাকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল।

স্বীকারোক্তি আদায়ে ক্রসফায়ার, পুড়িয়ে মারার হুমকি

বগুড়া ডিবি ও সিটিটিসি সদস্যরা আসামিদের গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য গুম, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ নানা কৌশল প্রয়োগ করেছেন। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কামরুল ইসলাম শাকিলকে চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন এসপি আসাদুজ্জামান, এসপি আরিফুর রহমান মণ্ডল ও এসআই জুলহাস। একইভাবে বরিশাল থেকে গুম হওয়া নাজমুল হাসানও বগুড়া ডিবি, সিটিটিসি ও পুলিশের এলআইসি শাখার সদস্যদের হাতে বৈদ্যুতিক শকসহ নানা পদ্ধতিতে নির্যাতনের শিকার হন। তরুণ প্রকাশক তানভীর ইয়াসিন করিমকে সিটিটিসি অফিসে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। এ ছাড়া আসামি আবুল কাসেমকে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

মামলার আসামি নাজমুল হাসান অভিযোগ করেন, বগুড়ায় গুম থাকা অবস্থায় পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার সিনিয়র এএসপি নুর আলম তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘দেখছ, র‌্যাব কীভাবে মিরপুরে কবুতর আব্দুল্লাহকে পরিবারসহ পুড়াইয়া মারছে? আমাদের কথা না শুনলে তোমাকেও পরিবারসহ পুড়াইয়া মারব।’

পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা

ভুক্তভোগীরা জানান, পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা ছিল ভয়ংকর ও বিতর্কিত। বগুড়ার এসপি আসাদুজ্জামান (পরে সিটিটিসির প্রধান), এএসপি আরিফুর রহমান মণ্ডল, এসআই জুলহাস, এসআই মুজিবর, এসআই ফারুক, ওসি তুহিন, ওসি হাসিব, এডিসি সাইফুল, এসআই প্রদীপ কুমার, ডিসি মহিবুল ইসলাম, এডিসি ওয়াহিদুজ্জামান নুর ও এএসপি নুর আলমসহ অনেকেই নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও স্বীকারোক্তি আদায়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আরিফুর রহমান মণ্ডল, এসআই জুলহাস ও এসআই ফারুক নির্যাতনে সরাসরি অংশ নেন এবং এসপি আসাদুজ্জামানের উপস্থিতিতেও মারধর ও গালাগালি করা হয়।

শেরপুরে তদন্তের সময় অ্যাডিশনাল এসপি আমিনুল ইসলাম আসামির ওপর চাপ প্রয়োগ করেন আর ডিবির ওসি কামরুজ্জামান ভয়ভীতি দেখিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ইন্সপেক্টর জামান ক্রসফায়ারের হুমকি ও অস্ত্র উদ্ধারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন এবং সিটিটিসির ডিসি মহিবুল ইসলাম খান তার অফিসে সরাসরি নির্যাতন করেন।

সাজানো মামলায় পুলিশের নির্যাতনের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকাও ছিল চরম বিতর্কিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। আসামিদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশ যেসব ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে ম্যাজিস্ট্রেটদের উদাসীনতা ও সহযোগিতা সে সময়কার বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। তানভীর ইয়াসিন করিমের ক্ষেত্রে তিনি নির্যাতনের অভিযোগ জানালেও ম্যাজিস্ট্রেট তা আমলে না নিয়ে উল্টো আরো রিমান্ডের হুমকি দেন এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন।

একইভাবে কাসেমের স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় ম্যাজিস্ট্রেট নির্যাতনের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তদন্তের প্রয়োজন মনে করেননি, বরং তাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে চাপ দেন। পুলিশের হুমকির মুখে কাসেমকে বলা হয়, ‘যা বলব, আদালতে তাই বলবে, নইলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলব।’ তার পরিবারের সদস্যদেরও মামলা করার ভয় দেখানো হয়। দীর্ঘ গুমের পর কাসেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়, যা বিচারিক অব্যবস্থাপনার প্রকট চিত্র তুলে ধরে।

নির্যাতনের কৌশল

তানভীর ইয়াসিন করিমসহ অন্য ভুক্তভোগীরা জানান, সিটিটিসি ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে নানা নির্যাতনের কৌশল ব্যবহার করেছেন। তারা হাত-পা বেঁধে অত্যধিক শারীরিক চাপের মাধ্যমে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করে। এ ছাড়া ‘টর্চার কনভিন্স’ নামে পরিচিত এক পদ্ধতিতে গরম রুমে রেখে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে তাদের ভেঙে ফেলা হয়। অবিশ্বাস্য হুমকি ও ভয় দেখানোর মাধ্যমে আরো বেশি নির্যাতনের শঙ্কা দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে আসামির পরিবারকে, বিশেষ করে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল, যাতে তারা আরো চাপের মধ্যে পড়ে। এমনকি ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে দীর্ঘ সময় অসুস্থ অবস্থায় আটকে রেখে তাদের দুর্বল করা হয়।

পুলিশ কী বলেছিল, এখন কী বলছে

মামলার নথি অনুযায়ী, রমনা জোনের তখনকার ডিসি মারুফ হোসেন সরদারের নির্দেশে হোটেল ওলিওতে এই অভিযান চালিয়েছিল কলাবাগান থানা-পুলিশ। পরে অভিযানে যোগ দেয় সিটিটিসি ও সোয়াট।

অভিযান শেষে ১৫ আগস্ট সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেছিলেন, ‘সাইফুল এক সময় মাদরাসায় পড়তেন, ছাত্রশিবিরের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে, তারাই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আজকে এই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছিল।’

সিটিটিসির তখনকার প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পুলিশ অভিযান শুরুর পর জঙ্গি সাইফুল একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই হোটেল কক্ষের দরজা উড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ গুলি শুরু করলে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে হোটেলের করিডোরের দেওয়াল ধসে নিচে পড়ে যায়।’

এই ঘটনায় জড়িত মনিরুল ও আসাদুজ্জামানসহ অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। সাবেক আইজিপি শহীদুল হক কারাগারে। জঙ্গি সাজিয়ে গুম ও মামলায় নিরীহ তরুণদের সম্পৃক্ত করার অন্যতম দোসর আরিফুর রহমান মণ্ডলকে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। গুমকালীন নির্যাতনের অন্যতম কুখ্যাতি পাওয়া এসআই জুলহাসকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তাদের খুদেবার্তা দিলেও তারা জবাব দেননি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ ওমর বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে জঙ্গি নাটকের নামে যারা নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেসব ব্যক্তি বা ভুক্তভোগী পরিবারের এখন অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেওয়া উচিত। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এসব অপরাধের বিচার হতে পারে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এই ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনি প্রতিকার ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ - খেলা

আপনার জন্য নির্বাচিত