বাংলাদেশ সচিবালয়ে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের বিদ্রোহের ঘটনায় উসকানিদাতা আনসারের সাবেক ডিজি ও সাবেক পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের ভাই এ কে এম আমিনুল ইসলাম বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ পাওয়া গেলেও রহস্যজনক কারণে তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে ঘটনার পর তদন্ত কমিটি তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তাকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি দাবি করেছেন, বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তবে তার গতিবিধি নজরদারিতে রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতর ও বাইরে থেকে ৩৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল যৌথ বাহিনী। ঢাকা ও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৪৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের চারটি থানায় করা মোট ১১টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ৪৪৭ জন আনসার সদস্যকে বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে সচিবালয়ে ভাঙচুর ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো অনেক আনসার সদস্য পলাতক রয়েছেন।
বিদ্রোহের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভিডিপি জানিয়েছে, আইন অমান্য করে দাবি আদায় ও বিদ্রোহের ঘটনায় ৬৪৮ জন আনসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাহিনীটি। অন্যদিকে আট হাজার ৬১০ জন আনসারের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করেছে ওই বাহিনী। যাদের পদ স্থগিত রয়েছে ওই সব সদস্যকে বাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হবে কি না তা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তে যদি কারো নামে বিদ্রোহের প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের সঙ্গে তার খিলগাঁও কার্যালয়ে এ প্রতিবেদক সরাসরি যোগাযোগ করলে কোনো সাড়া দেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশের রমনা অঞ্চলের ডিসি মাসুদ আলম দৈনিক আমার দেশকে জানান, ‘সচিবালয়ের ঘটনায় যেসব আনসার সদস্য অরাজকতা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন করেছিল, তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কয়েকদিন আগে আমরা দুইজন বিশৃঙ্খলাকারী আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি আরো জানান, মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষে আমরা দ্রুতই চার্জশিট দেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সবিচালয়ের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। কিছু উচ্ছৃঙ্খল আনসার সদস্য অরাজকতা করে এবং জিম্মি করে দাবি আদায় করবে এর কোনো গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। তবে ঘটনার পর আমরা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আনসার সদস্যরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে কোনো জোরালো দাবি তুলতে পারেননি। কিন্তু ৫ আগস্ট হঠাৎ সরকারের পতনের পর একদল আনসার সদস্য বাহিনীতে থাকা অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে হঠাৎ আন্দোলন শুরু করে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট তারা প্রায় ১২ হাজার আনসার সদস্য জটলা করে সচিবালয়ে ঘেরাও করে। পরে তারা জোরপূর্বক কেপিআইভুক্ত এলাকা সচিবালয়ে প্রবেশ করে। সচিবালয়ে প্রবেশ করে সব পথ বন্ধ করে তারা কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দেয়নি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভা থেকে জানানো হয় যে, আনসার সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে এবং তাদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো কথা না শুনে বাইরে এসে গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং সড়কে যান চলাচল আটকে দেন। মূলত জিম্মি করে তাদের দাবি আদায়ই মূল লক্ষ্য ছিল।
পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সচিবালয়ে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, আনসারের আন্দোলনের ১৯ সমন্বয়ক ছিলেন। এদের অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত। তবে বাহিনীটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা শাখা তাদের গতিবিধি নজরদারি করছে। নতুন করে যাতে কেউ বিদ্রোহ করতে না পারে এজন্য মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়িয়েছে তারা। সূত্র জানায়, ওই ঘটনার শিগগিরই তদন্ত কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন।